ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাল তৈরি হচ্ছে নামজারির ফরম, সিল ও স্বাক্ষর

জাল তৈরি করা হচ্ছে বগুড়ায় জমির নামজারির জন্য প্রয়োজনীয় সরকারি ডিসিআর (ডুপ্লিকেট কার্বন রসিদ) ফরম। শুধু এ ফরমই নয়, নামজারি ইস্যুর ক্ষেত্রে জাল তৈরি করা হচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সিল এবং স্বাক্ষরও। আর ভূমি অফিসের কর্মচারীই এই কাজের সাথে জড়িত।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নামজারি করতে আসা ভূমি মালিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যেই এসব জাল তৈরি করা হচ্ছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে  সরকারি অর্পিত সম্পত্তি লিজ দেওয়ার ক্ষেত্রেও জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। জালিয়াতির শিকার এক ব্যক্তি সম্প্রতি জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর এ-সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর তা জানাজানি হয়।

তবে ওই ঘটনায় দুপচাঁচিয়া উপজেলা ভূমি অফিসে কর্মরত ওবাইদুর রহমান নামে এক অফিস সহকারীকে শুধু সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করেই দায় সেরেছে কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর এবং সরকারি ফরম জাল করার মতো ফৌজদারি অপরাধ করলেও তার বিরুদ্ধে কোন মামলা করা হয়নি।

দুপচাঁচিয়া উপজেলার জিয়ানগর ইউনিয়নের খিদিরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবু সাঈদ সুজা গত ১২ আগস্ট স্থানীয় সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে লিখিত অভিযোগে ওবাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তিনি জানান, তার এক নাতনিসহ পাঁচ নিকট আত্মীয়ের মালিকানাধীন জমিগুলোর নামজারি করার জন্য তিনি সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের অফিস সহকারী ওবাইদুর রহমানের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ মোট ১৮ হাজার টাকা জমা দেন। নির্ধারিত ৪৫ দিন পর তাকে ডেকে নিয়ে পাঁচটি খারিজের (নামজারি) ডিসিআর দেন ওবাইদুর। পরে ওই ডিসিআরগুলো (কেস নং-১৫৪৭, ১৬৯৪, ১৬৯৭, ১৬৯৬ ও ১৬৯৩) নিয়ে জিয়ানগর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে  তিনি সেগুলো জমা দিয়ে সেগুলোর বিপরীতে খতিয়ান চাইলে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা তাকে জানান, ওই পাঁচটি ডিসিআরই ভুয়া। তিনি বলেন, প্রতিটি নামজারির জন্য সরকার নির্ধারিত ফি এক হাজার ১৫০ টাকা হলেও ওবাইদুর রহমান তিন হাজার ৬০০ টাকা করে নিয়েছেন।

ওই অভিযোগটি অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতিটি ডিসিআরের বহি ও পৃষ্ঠা নম্বর পৃথক হওয়ার কথা থাকলেও বেশ কয়েকটিতে তা একই। এ ছাড়া প্রতিটি ডিসিআরে ‘সহকারী কমিশনার (ভূমি)’ ও ‘নাজির’ হিসেবে যাদের স্বাক্ষর রয়েছে সেগুলোও জাল।

তবে এ  ব্যাপারে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত ওবাইদুরের সাথে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার তার মোবাইল নম্বরে কল দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

এই ব্যাপারে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুল মালেক জানান, বিভাগীয় মামলার মাধ্যমেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। ওবাইদুর রহমানের বিরুদ্ধেও তাই করা হবে। যেহেতু জাল ফরম পাওয়া গেছে, সে ক্ষেত্রে মনে হয় এই জালিয়াতির সাথে একটি চক্র জড়িত এবং তারা অন্যান্য ভূমি অফিসেও সক্রিয় রয়েছে। তাই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিৎ।

আনন্দবাজার/এইচ এস কে

সংবাদটি শেয়ার করুন