শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় চাষাবাদ অনিশ্চয়তায় বাঁশখালীর ৫৫০ একর জমি

বাঁশখালীর বৈলছড়ি ইউনিয়নের চেচুরিয়া গ্রামের কান্দাখালী খাল ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে শুষ্ক মওসুমে ৫৫০ একর জমির চাষাবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। চেচুরিয়ার মানুষের চাষযোগ্য জমির সবচেয়ে বড় অংশ চেচুরিয়া বিল ও ধোঁপার বিল। আগে বর্ষাকালীন সময়ে জলাবদ্ধতার কারণে এ দুটি বিলে কৃষকের ধান জলমগ্ন হয়ে পঁচে যেত এবং শুষ্ক মৌসুমে রুক্ষ হয়ে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যেত। যার কারণে এ দুটি বিল চেচুরিয়াবাসীর দুঃখ হিসেবে বিবেচিত হতো। এ বিলের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কান্দাখালী খাল। এই খালটি চেচুরিয়া ঘোনাপাড়া হয়ে জলকদর খালের সাথে মিলিত হয়েছে।

জানা যায়, ১৯৭৭ সালে কৃষকের এই দুঃখ লাঘবসহ চেচুরিয়াবাসীর ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে ওই এলাকার সমাজসেবক আনোয়ারুল আজিম একই গ্রামের সুধীর রঞ্জনকে সাথে নিয়ে গ্রামবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করে চেচুরিয়া আদর্শ গ্রাম প্রকল্পের গোড়াপত্তন করেন। এই প্রকল্পের আওতায় তিনি মৃতপ্রায় কান্দাখালী খাল সেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে পুনঃখনন করেন। পরবর্তীতে চেচুরিয়া গ্রামে তিনটি গভীর নলকূপ স্থাপন করেন। এতে বর্ষাকালীন জলাবদ্ধতার সমস্যা এবং শুষ্ক মৌসুমের পানির সমস্যা দূরীভূত হয়। যার ফলে অল্প সময়েই চেচুরিয়ায় কৃষি বিপ্লব সংঘটিত হয়। আনোয়ারুল আজিমের মাধ্যমে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই খাল পুনঃখনন করেন এবং পরিদর্শনে এসে খালে নেমেছিলেন।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী এই খালটির অস্থিত্ব বর্তমানে বিলীনের পথে। প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়া কান্দাখালী খাল জুড়ে এখন চলছে কচুরিপানার রাজত্ব। দুই দিক থেকে ভরাট হয়ে খালটি খুব সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। এই খালটিকে পুনঃখনন করে চেচুরিয়ায় আবার কৃষি বিপ্লব সংঘটিত করা উচিত বলে মনে করেন সচেতন মহল। খালটিকে পুনঃখনন করলে বর্ষাকালে আর পানি জমে থাকবে না। এতে করে কৃষকের স্বপ্নের ফসল আর নষ্ট হবে না। ফলে কৃষকরা লাভবান হবে এবং কৃষিকাজের প্রতি মানুষ আগ্রহী হয়ে উঠবে। এছাড়াও পুনঃখনন করে শুষ্ক মৌসুমে এই খালে পানি মজুদ করে কৃষকের পানির সমস্যা দূর করা সম্ভব। সবকিছু মিলিয়ে বলতে গেলে, ঐতিহ্যবাহী কান্দাখালী খাল পুনঃখনন করাটা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুনঃ  বাঁশখালীতে পুলিশই নেমে পড়লেন রাস্তা সংস্কারে!

এলাকাবাসীরা জানান, জনগুরুত্বপূর্ণ খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে দুই পাড়ের জমির ধান বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। অপরদিকে ভরাটের কারণে শুষ্ক মওসুমে পানির ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় শীতকালীন সবজি চাষে হিমশিম খেতে হয় তাদেরকে।

স্থানীয় বাসিন্দা তাফহীমুল ইসলাম বলেন,”এই খাল পুনঃখনন করলে চেচুরিয়ায় আবারও কৃষি বিপ্লব সংঘটিত করা সম্ভব। মানুষ কৃষিকাজের প্রতি আরো বেশি উদ্বুদ্ধ হবে। কেননা, তখন পানিতে ডুবে ফসল নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিটা কমে যাবে।”

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বৈলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান কফিল উদ্দীন এ প্রতিবেদককে বলেন, বৈলছড়ির ৩টি খালের তালিকা ইউএনও মহোদয় বরাবর প্রেরণ করেছি। খালগুলো হলো কাঁন্দাখালী খাল, বৈলছড়ি বড় ছড়া ও বৈলছড়ি ছড়া। আশাকরি নভেম্বরের মধ্যে এ তিনটি খালের সংস্কার কাজ শুরু হবে।

আনন্দবাজার/শাহী/বেলাল

সংবাদটি শেয়ার করুন