ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাঁচশ বছরের সাক্ষী চাঁপাইনবাবগঞ্জের তেঁতুল গাছ

পাঁচশ বছরের পুরানো চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের একটি তেঁতুল গাছ দাঁড়িয়ে আছে এখনও মাথা উঁচু করে।

জানা গেছে, গাছটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে নাচোল উপজেলার বরেন্দ্র ভূমির শুড়লা গ্রামে অবস্থিত এ গাছটি স্থানীয়দের জন্য শুধু ঐতিহ্যের নিদর্শনই নয়, তাদের পরম যত্নে গাছে এখনও ফুল ফোটে, ফল ধরে এবং এতে আশ্রয় পেতে বাসা বাঁধে অনেক পাখি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গাছটি ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলন এবং সাঁওতাল বিদ্রোহের সাক্ষী। প্রতি বছর প্রজনন মৌসুমে অন্তত কয়েক’শ বক এসে বাসা বাঁধে এ গাছে। ডিম পাড়ে, বাচ্চা ফোটায়। ছানাগুলো বড় হয়ে এক সময় উড়ে চলেও যায়। এ গ্রামের কেউ বক শিকার করে না বলে পুরো প্রজননকাল খুব নিরাপদে দিন কাটায় বকগুলো। প্রাচীন তেঁতুল গাছটি দেখেতে প্রায়ই দেশের নানা প্রান্ত থেকে লোকজন আসে শুড়লা গ্রামে।

তেঁতুল পাছটির পাশে জেলা প্রশাসনের টানানো একটি সাইন বোর্ডে লেখা রয়েছে- বিশেষজ্ঞরা এ গাছের বয়স ‘কমপক্ষে ৫০০ বছর’ বলে মত দিয়েছেন। গাছটি ‘ভৌতিক, জৈবিক, সামাজিক ও পরিবেশগত দিক থেকে ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ এবং ‘অতিকায় প্রচীন’ বৃক্ষ হিসেবে সংরক্ষিত উল্লেখ করে গাছ এবং পাখির বাসার কোনো ক্ষতি না করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে বোর্ডে। নির্দেশনা না মানলে বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের সতর্কতাও জুড়ে দেওয়া হয়েছে ওই বোর্ডে।

নেজামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল হক জানান, ২০০৩ সালের দিকে উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে তেঁতুল গাছটি পরীক্ষা করান চাঁপাইনবাবগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক নূরুল হক। সে সময় বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে গাছটির বয়স ৫০০ বছরেরও বেশি বলে নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, প্রাচীন এ গাছ শুধু আমাদের এলাকার গর্বই নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্যও।

শুড়লা গ্রামে ওই গাছের পাশে একটি বাড়িতে স্বামী এবং দুই ছেলেকে নিয়ে থাকেন ৫৫ বছর বয়সী কল্পনা প্রামাণিক। প্রায় পাঁচশ বছর সময় বয়ে গেলেও শুড়লা গ্রামের ৭০ বছরের কেষ্টধর বর্মণের স্মৃতিতে তেঁতুল গাছটি যেন ঠিক আগের মতই আছে।

তিনি বলেন, বাপ-ঠাকুরদারাও গাছটি নিয়ে যেমন গল্প করতেন, গাছটি এখনও তেমনই আছে। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন গাছটি দেখতে এখানে আসে। এই বৃক্ষর জন্য অনেক মানুষ এ গ্রামকে আজ চেনে।

এই ব্যাপারে স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ‘সেভ দ্য নেচার’র চাঁপাইনবাবগঞ্জের অন্যতম সমন্বয়ক ফয়সাল মাহমুদ জানান, একটি গাছ শুধু অক্সিজেনই দেয় তা নয়, একটি গাছকে ঘিরে পাখিসহ নানা কিটপতঙ্গ বসবাস কজ, বাস্তুসংস্থান তৈরি হয়। যা পরিবেশে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সে কারণে এ ধরনের সব প্রাচীন বৃক্ষ রক্ষা করা খুবই প্রয়োজন।

আনন্দবাজার/এইচ এস কে

সংবাদটি শেয়ার করুন