গাজীপুরের ভাওয়াল অঞ্চলে পান করার জন্য সুপেয় পানির অভাব ছিলো প্রাচীণ কাল থেকে বর্তমান সময়ের নব্বই (৯০) দশক পর্যন্ত। আর এই সুপেয় পানি পানের অভাব বোধের তাড়না থেকেই এই অঞ্চলের মানুষ খাল-বিল,নদী-নালা, পুকুর থেকে সংগ্রহ করতো ঘর-গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় পানি। আর তৃষ্ণা নিবারণের জন্য বিশেষ প্রয়োজন ছিলো স্বচ্ছ পানি। আর এই স্বচ্ছ সুপেয় পানি পান করার জন্য সংগ্রহ করতো গভীর কূপ বা কুয়া থেকে।
ভাওয়াল অঞ্চলের গ্রাম-বাংলার প্রতিটি স্থানে প্রাচীণ কাল থেকে নব্বই দশকের পূর্ব পর্যন্ত সুপেয় পানির জন্য কূপ বা কুয়া ছিলো। কিন্তু সময়ের আবর্তনে এখন ভাওয়াল অঞ্চলের একমাএ সুপেয় পানির উৎস কূপ বা কুয়াগুলো হারিয়ে গেছে, যা এখন শুধুই স্মৃতি। এখন আর বাড়ি বাড়ি কুয়া দেখতে পাওয়া যায় না। কিছুদিন আগেও যেসব বাড়িতে কুয়া ছিলো, এখন সেখানে টিউবওয়েল রয়েছে।
সময়ের আবর্তনে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, নব্বই দশক পরবর্তী জেনারেশনের বদৌলতে ( বিদেশ পাড়ি দেওয়ার কারণে) স্বস্থি ফিরেছে হয়তোবা সুখও বেড়েছে। কিন্তু ভাওয়াল অঞ্চলের গ্রাম-বাংলার বুক থেকে হারিয়ে গেছে প্রাচীণ ঐতিহ্য একমাএ সুপেয় পানির উৎস কুয়া।
আগে বিকেল বেলা গ্রাম-বাংলার প্রতিটি মা-বোনেরা সন্ধ্যে বেলায় কোমরে কলসী নিয়ে কুয়া থেকে পানি আনতো। কালের পরিক্রমায় এখন আর সেই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায় না। তথ্য প্রযুক্তির যুগে বর্তমানে মানুষ অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়েছে। এখন শহরের মতো করে গ্রামাঞ্চলেও বৈদ্যুতিক মেশিনের সাহায্যে মাটির গভীর থেকে পানি তুলা হয়।
এদিকে ভাওয়াল অঞ্চলের কিছু গ্রাম এলাকায় এখনও কুয়ার দেখা পাওয়া যায়। গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার কামারগাঁও, জাঁব, ভিকারটেক,আড়াল,সনমানিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামে, সদর উপজেলা, শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি,মারতা,কালীগঞ্জ ও কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এখনও কুয়া দেখতে পাওয়া। কিন্তু সেগুলো এখন আর আগের মতো ব্যবহার হয় না।
এদিকে সরেজমিনে গিয়ে কাপাসিয়া উপজেলার কামারগাঁও গ্রামের মোল্লা পাড়ায় একটি কুয়া দেখা যায়। সেখানে কুয়াটি এখনও অরক্ষিত অবস্থায় আছে, টিউবওয়েল থাকার পাশাপাশি গ্রীষ্মকালে এই কুয়া থেকে পানি তুলে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। তবে শুধুমাএ পানি পান করা ব্যতিত অন্যান্য সকল কাজে এই পানি ব্যবহার করা হয়। কারণ ,গ্রীষ্মকালে সাধারণত ভাওয়াল এলাকায় পানির স্তর স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি নীচে নেমে যায়।
আনন্দবাজার/শহক