ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডিজিটাল প্রদ্ধতিতে আধুনিকায়ন হচ্ছে কপিলমুনি হাসপাতাল

বর্তমান সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতায় অবশেষে ডিজিটাল প্রদ্ধতিতে আধুনিকায়নের মধ্যে দিয়ে ২০ শয্যায় উন্নীত হতে চলেছে কপিলমুনি হাসপাতাল। কিন্তু এখন এটি সময়ের ব্যাপার মাত্র। বিষয়টি দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

প্রসঙ্গত, দক্ষিণের উপকূলীয় বিস্তীর্ণ জনপদের লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার কথা বিবেচনা করে আধুনিক কপিলমুনির প্রতিষ্ঠাতা রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু ১৯১৫ সালের ৭ এপ্রিল নিজস্ব ২ একর সম্পত্তির উপর নিজ অর্থায়নে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ২০ শয্যা বিশিষ্ট যাদব চন্দ্র চ্যারিটেবল ডিসপেনসারী ও ভরত চন্দ্র হাসপাতাল। প্রথমত তৎকালীন জেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠাতার প্রদেয় অর্থের লভ্যাংশ দ্বারা পরিচালিত হত হাসপাতালটি। পরে দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৫ সালে হাসপাতালটি সরকারিকরণ হলেও ২০ শয্যার স্থলে ১০ শয্যায় নামিয়ে আনা হয়।

বাণিজ্যিক কেন্দ্র কপিলমুনি (বিনোদগঞ্জ) ভৌগলিক অবস্থান বিন্যাসে খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোর সীমানার প্রায় ২০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে অবস্থিত কপিলমুনি হাসপাতালটি সেই স্মরণাতীত কাল থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য-সেবা নিশ্চিত করে আসছে। স্বাস্থ্য-সেবায় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর তৎকালীন সময়ে নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থার পাশাপাশি হাসপাতালটিতে স্থাপন করেন, এক্স-রে মেশিন।

সূত্র জানায়, সে সময় খুলনা সদর হাসপাতালের উন্নত চিকিৎসার জন্য কোন এক্স-রে মেশিন না থাকায় তৎকালীণ জেলা বোর্ডের প্রেসিডেন্টসহ সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তার বিশেষ অনুরোধে কপিলমুনি হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি সদর হাসপাতালে নিজ খরচে ভবন নির্মান সহ প্রতিস্থাপন করা হয়, যা আজও দৃশ্যমান। উপজেলার কপিলমুনির সহচরী বিদ্যামন্দিরের সাবেক প্রধান শিক্ষক হরেকৃষ্ণ দাশ, মেহেরেুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রহিমা আক্তার শম্পা, ইউপি চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়াদ্দার, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আনন্দ মোহন বিশ্বাস, সাংবাদিক এস এম মুস্তাফিজুর রহমান পারভেজসহ জনপদের বিশিষ্ট জনরা জানান, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বর্ধিষ্ণু জনপদের বিশাল জনগোষ্ঠির চিকিৎসা সেবা প্রদানে প্রয়োজনীয় জনবল এবং অবকাঠামোগত অবস্থা কপিলমুনি হাসপাতালের নেই।

তবে হাসপাতালের শয্যা বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি। বৃহত্তর খুলনার ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক ও বাহক হিসেবে প্রাচীণ জনপদ কপিলমুনির নাম অগ্রগণ্য। বিভিন্ন সময়ে জনপদে জন্ম গ্রহন করেছেন, বরেণ্য ব্যক্তিরা। এসময় তারা আরো জানান, বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে জনপদের সচেতন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ হাসপাতালের শয্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি আধুনিকায়নের আন্দোলন করে আসছেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন মিডিয়ার স্থানীয় প্রতিনিধিদের কথাও কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করেন তারা।

এর আগে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য এড. শেখ মোঃ নূরুল হক স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর কপিলমুনি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা উন্নীত করনে একটি ডিও দিয়েছিলেন, যার স্মারক নং-বাজাসস/১০৪/খুলনা-৬/২০১৮-১০৯১ নং স্মারকে তিনি ঐতিহাসিক বর্ধিষ্ণু জনপদ কপিলমুনি হাসপাতালের অবকাঠামোর উন্নয়নের পাশাপাশি শয্যা সংখ্যা কমপক্ষে ২০ শয্যায় উন্নিত করণ এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি এবং সময়ের দাবিও বটে বলে উল্লেখ করেন। এরপর থেকে জনপদের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষরা মূলত যার যার অবস্থান থেকে হাসপাতালটির আধুনিকায়নে নিরব আন্দোলন গড়ে তোলেন।

দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র এপ্রতিনিধিকে জানান, অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি কপিলমুনি হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠাতার মূল নামকরণ ভরত চন্দ্র হাসপাতাল নামে ৩১ শয্যায় উন্নীত হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ জানুয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুলিয়া সুকায়না, উপজেলা সহকারী কমিশনার আরাফাতুল আলমের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের জরিপকাজ সম্পন্ন করেন। তবে সর্বশেষ সূত্র জানায়, ৩১ শয্যা নয়, আপাতত ২০ শয্যায় ফিরে যাচ্ছে কপিলমুনি হাসপাতাল। এ হাসপাতালটি আধুনিকায়ন ও ডিজিটালাইস করতে এ খাতে প্রায় ২০ কোটি টাকা বরাদ্ধ রাখা হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে।

এমনকি ইতোমধ্যে হাসপাতালের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি জনবল বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যদি গ্রহণ করে চলেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। তবে এর নাম করণের জটিলতা নিরসনে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত করা হয়নি। অন্যদিকে হাসপাতালটি নির্মিত হলে এজনপদের মানুষের স্বাস্থ্য সেবার মানন্নোয়নে যেমন ভূমিকা রাখবে, তেমনি এটি দক্ষিণ খুলনার মধ্যে সবথেকে দৃষ্টিনন্দন হবে এমনটি আশা এ জনপদের মানুষের।

আনন্দবাজার/শাহী/ইমদাদ

সংবাদটি শেয়ার করুন