গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণ করে আন্তর্জাতিক দিবস মায়ের ডাক ও হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স নেটওয়ার্ক নারায়ণগঞ্জ শাখার সম্মিলিত উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শনিবার (২৯ আগস্ট) বেলা ১১টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধনে সোনারগাঁওয়ে কাঁচপুরের আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেনসহ গুম হওয়া সকল ব্যক্তিকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানানো হয়। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের নারায়ণগঞ্জ ইউনিটির সমন্বয়ক সাংবাদিক বিল্লাল হোসেন রবিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে মায়ের ডাক ও হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স নেটওয়ার্কের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অধিকারের ডিফেন্ডার মুহাম্মদ কবির উদ্দিন চৌধুরী।
কর্মসূচিতে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সিপিবি নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, সিদ্ধিরগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবুল। উপস্থিত ছিলেন- গুমের শিকার আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী জোৎসা বেগম, ইসমাইল হোসেনের বোন সুরাইয়া বেগম, মানবাধিকারকর্মী এস এম এনামুল হক প্রিন্স, সিফায়েত আলম মাসফি, নাদিয়া জাহান, বিজয় হাইস্কুলের পরিচালক এস এম বিজয়, সাংবাদিক শাহজালাল মিয়া, আহসানুল হাবিব সোহাগ, শিক্ষার্থী খলিলুর রহমান, সবুজ মিয়া, কামরুল হাসান, রেজওয়ান সাঈফ, অপু বিশ্বাস, সাইফুল ইসলাম, খাইরুল ইসলাম, নিফতি প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ২০১৪ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী এলাকা থেকে অপহৃত হয় সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরের আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন। দীর্ঘ ৬ বছরেও তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।
তার পরিবার প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে অনন্ত ইসমাইলের তথ্যটা জানার জন্য। তিনি যদি জীবিত থাকেন তাহলে কোথায়, কিভাবে আছেন। আর যদি বেঁচে না থাকেন তাহলে তার লাশটা কোথায়? সরকারের কাছ থেকে এই তথ্যটা তারা জানতে চায়। বক্তারা আরও বলেন, আজ আমরা গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণ করছি এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবির পাশাপাশি ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ার’ এর নামে নাগরিকদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা ও হেফাজতে নির্যাতনসহ সকল রাষ্ট্রীয় নিপীড়নবন্ধের দাবি জানাচ্ছি।
বক্তারা আরো বলেন, এই দিবসটি এমন এক সময় পালিত হচ্ছে যখন বাংলাদেশে নাগরিকদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্গন ব্যাপক পর্যায়ে নিয়েছে। গুমের পাশাপাশি চলছে ব্যাপকভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতন। দেশে বিচার ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ার ফলে রাষ্ট্র কর্তৃক দায়মুক্তির সুযোগে গুম বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও হেফাজতে নির্যাতন করে হত্যর ঘটনাগুলো অব্যাহতভাবে ঘটে চলেছে। গুম হওয়া ব্যক্তিরা নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডেরও শিকার হচ্ছেন। গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্ত্রী-সন্তানরা আর্থিক ও সামাজিকভাবে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে চরম অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করছেন। অন্যদিকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বানোয়াট ও মিথ্যা প্রচারণা চালানোর কারণে তাদের পরিবারের সদস্যরা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন। এই অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হলেই গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যসহ রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা রাষ্ট্র্রের হাতে বিভিন্ন ধরনের হুমকি এবং হয়রানির সম্মুখিন হচ্ছেন।
উল্লেখ, ২০০৬ সালের ২০শে ডিসেম্বর গুম হওয়া থেকে সকল ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশনটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। এই দিনকে সামনে রেখে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ ও ‘হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স নেটওয়ার্ক’ যৌথভাবে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে কর্মসুচি পালন করছে।
৩০শে আগস্ট গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস। কিন্তু ওই দিন পবিত্র আশুরা হওয়ায় ২৯শে আগস্ট শনিবার কর্মসূচি পালন করা হয়।
আনন্দবাজার/শাহী/আহসান