মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা তেতুলিয়া ও কালাবদর নদীর করাল গ্রাসে দিশেহারা। বছরজুড়ে ভাঙনের কবলে থাকা এলাকার বাসিন্দারা যেরকম বসতভিটা নিয়ে থাকে আতঙ্কে, ঠিক তেমনি বিলীনের শঙ্কায় থাকে এখানকার সরকারি স্থাপনাগুলোও। মাত্র তিনবছর পূর্বে ২০১৭ সালে নির্মাণ হওয়া একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন বুধবার দুপুর থেকে শুরু করে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে হারিয়ে গেছে কালাবদর নদীর গর্ভে।
উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের বগীরচর গ্রামের শিশু শিক্ষার্থীদের বাতিঘর খ্যাত চৌধুরীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বৃহস্পতিবার সম্পূর্ণভাবে নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। বিষয়টি দৈনিক আনন্দবাজারকে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শাহাদাত হোসেন ও স্থানীয় ইউপি সদস্য বশিরুল হক।
তারা জানান, একসময় এই বিদ্যালয়টি শতাধিক শিশুদের পাঠদানে মুখরিত ছিল। যদিও মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত কয়েকমাস ধরে সেই পাঠদান কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে।
ইউপি সদস্য বশিরুল হক জানান, ২০১৭ সালে আগে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম স্থানীয় উদ্যোগে কোনো রকম একটি টিনের ঘরে পরিচালনা করা হতো। ওই বছরই নতুন নির্মাণ হওয়া দ্বিতল পাকা ভবনটি পেয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ গ্রামের মানুষ অনেক খুশি হয়। তখন বিদ্যালয়ের পাশের কালাবদর নদীটিও বহু দূরে ছিল। এরপর গত দুই বছরের অব্যাহত ভাঙনে বিদ্যালয়ের ভবনটির কাছাকাছি চলে আসে নদী। আর এবারের ভাঙনে বিদ্যালয়ের ভবনটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
বুধবার বেলা ১১টায় শুরু হওয়া নদী ভাঙনে বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যালয় ভবনটি বিলীন হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে ভাঙন রোধে বিদ্যালয় সংলগ্ন নদীতে বালুর বস্তাও ফেলা হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না। চোখের সামনে বিদ্যালয়ের ভবনটি বিলীন হতে দেখা ছাড়া কারোই কিছু করার ছিল না।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চরবগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে একটি রাস্তা ছিল। প্রায় ১০ কিলোমিটার লম্বা ওই সড়কটির দুই পাশে অনেক বাড়ি-ঘরও ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে নদী ভাঙন এতোটাই তীব্র আকার ধারণ করে যে সেই রাস্তাসহ বাড়ি-ঘর সবই নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন দৈনিক আনন্দবাজারকে কে বলেন, গত তিনবছরে চরবগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ ওই ইউনিয়নের তিনটি বিদ্যালয় নদীর গর্ভে হারিয়ে গেছে। বিদ্যালয় ভবনগুলো রক্ষায় আমাদের শত চেষ্টা বিফলে গেছে। নদী ভাঙন প্রতিরোধ করা না হলে আরো অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলীনের শঙ্কা রয়েছে বলে জানান উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
আনন্দবাজার/শাহী/ইউসুফ