ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হারিয়ে যাচ্ছে নিপুণ কারিগর বাবুই পাখি ও তার দৃষ্টিনন্দন বাসা

প্রকৃতির চারদিকে চোঁখ মেলে তাকালেও এখন আর তেমন চোঁখে পড়েনা সু-নিপুণ কারিগর বাবুই পাখি ও তার নিজের তৈরি করা দু’চোঁখ জুড়ানো, মন ভূলানো দৃষ্টিনন্দন বাসা। সময়ের আর্বতণে খুব দ্রুতই প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অপরুপ শিল্পী পাখি বাবুই ও তার বাসা। গ্রাম-গঞ্জের ঐতিহ্যবাহী নিপুণ বাসা তৈরীর কারিগর সেই বাবুই পাখি আজ বিলুপ্তির পথে।

কবি রজনীকান্ত সেনের ভাষায়-‘বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থািিক করো শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পড়ে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি ঝড়ে।’

এদিকে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের আনাচে-কানাচে আগে অনেক তালগাছ দেখা যেতো আর তালগাছের পাতায় পাতায় দেখা যেতো বাবুই পাখির তৈরি নজরকাড়া, দৃষ্টিনন্দন বাসা। সময়ের ব্যবধানে আবহমান গ্রাম-গঞ্জের সেই চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সু-নিপুণ বাসা তৈরির কারিগর বাবুই পাখি ও তার বাসা।

উপজেলায় এখন আর আগের মতো বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা আজ আর চোঁখে পড়ে না। গ্রাম-গঞ্জের পুকুর পাড়ে,মাঠে ও রাস্তার পাশে মাথা তুলে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ এখন আর দেখা যায় না কারণ, ইটভাঁটা ও মানুষের ঘর তৈরিতে অধিকাংশই ব্যবহার করা হয় তালগাছের কাঠ। ঠিক তেমনি ভাবে হারাতে বসেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সেই সাথে ভোরবেলায় পাখির কিচিরমিচির কলতান, সুমধুর পাখির ডাক ও উড়াউড়ি।

কাপাসিয়া উপজেলার কামারগাঁও, সনমানিয়া,বারিষাব,খিরাটী,ডুমদিয়া,হিজলিয়া, আড়াল,রাণীগঞ্জ ও চরণীলক্ষী গ্রামে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এসব গ্রামসহ যে সকল গ্রামে এক সময় তালগাছ ও নিপুণ কারিগর বাবুই পাখির কিচিরমিচির কলতানে মুখরিত থাকতো। এখন আর সেখানে বাবুই পাখির বাসা তৈরির জন্য তালগাছ নেই বললেই চলে। গ্রামের রাস্তা-ঘাট,পুকুর পাড়ে তালগাছ ছিলো এবং বাংলা আষাঢ় মাসের আগে থেকেই বাবুই পাখি বাসা বুনতে শুরু করে। আর বাসা বুনার সময় কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকতো পুরো গ্রাম। এখন হাতে গোনা কয়েকটা তালগাছ আছে। বাকি গাছগুলো কেটে হয়তো ইটভাঁটায় না হয় মানুষের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার হচ্ছে। আর এসবের ফলে একদিকে ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি আর অন্যদিকে কারিগর পাখি বাবুই হারাচ্ছে তার আবাস্থল।

একদিকে আষাঢ় মাস আসতে না আসতে কিচিরমিচির শব্দে মাঠ-প্রান্তরে উড়ে উড়ে বিভিন্ন গাছের লম্বা পাতার আঁশ ও খড়কুটো সংগ্রহ করে তারা তালগাছ, খেজুরগাছসহ প্রভৃতি গাছে বাসা বাধেঁ তারা। মূলত তালগাছে বাসা বুনতে এরা বেশি পছন্দ করে। বাবুই পাখির বাসা দেখতে যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনি মজবুত। আর একারণেই বাবুইকে তাঁতী পাখি বলা হয়।

এক কথায় বলতে গেলে, বাবুই পাখি একাধারে শিল্পী, স্থপতি ও সামাজিক বন্ধনের প্রতিচ্ছবি।

আনন্দবাজার/শাহী/সবুজ

সংবাদটি শেয়ার করুন