ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেয়েকে বিয়ে করতে না পেরে মা-মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে পেটালেন চেয়ারম্যান

‘গরু চুরির’ অপবাদ দিয়ে এক বয়স্ক মা ও তার তরুণী মেয়েকে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে একদল দুর্বৃত্ত ও স্থানীয় এক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৷

গত শুক্রবার (২১ আগস্ট) দুপুরে কক্সবাজারের সীমান্ত চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের পহরচাঁদা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায় শনিবার রাতে। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে গেলে সবখানে উঠে নিন্দার ঝড়। আত্মগোপন চলে যায় চেয়ারম্যান।

অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের নাম, মিরানুল ইসলাম। তিনি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান। দুর্বৃত্তরা হলেন তার সহযোগী।

জানা যায়, কক্সবাজারের চকরিয়ায় ‘গরু চুরির’ অপবাদ দিয়ে প্রথমে চেয়ারম্যানের সহযোগীরা নির্দয়ভাবে পেটান। তারপর মা-মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে প্রকাশ্যে সড়কে হাঁটিয়ে নিয়ে যায় স্থানীয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে। সেখানে চেয়ারম্যান নিজেও আবার তাদের মধ্যেযুগীয় কায়দায় অমানুষিক নির্যাতন চালান।

নির্যাতনের একপর্যায়ে তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হারবাং তদন্ত কেন্দ্রে খবর দিলে পুলিশ এসে মা-মেয়েকে উদ্ধার করে চকরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করে। নির্যাতনের শিকার মা-মেয়ে বর্তমানে চকরিয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের শারীরিক অবস্থা এখনও শংকামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

এদিকে একটি সূত্র জানায়, চেয়ারম্যানের লালসার লোপাটদৃষ্টিতে পড়া সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়ে চোরের অপবাদে পরিবারটিকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নিপীড়ন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে চকরিয়া থানার হারবাং তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শুক্রবার স্থানীয়রা ফাঁড়িতে খবর দিলে আমরা ফোর্স পাঠাই। আমাদের ফোর্স গিয়ে গুরুতর অবস্থায় মা-মেয়েকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে আসে। আমরা তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। স্থানীয় এক ব্যক্তির দায়ের করা গরু চুরির মামলায় তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে মা-মেয়েসহ চার জনের বাড়ি পটিয়ার শান্তির হাটে। অপরজনের বাড়ি পেকুয়া লালব্রিজ এলাকায়। তবে তাদের সঠিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’

হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে তাদের উপর নির্যাতন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমন অভিযোগ কেউ করেনি। আমাদের ফোর্স যখন ঘটনাস্থলে যায় তখন সেখানে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। আগে বিপদাপন্ন মা-মেয়েকে আমাদের হেফাজতে নিয়ে আসাটাকেই প্রাধান্য দিয়েছি। কী হয়েছে তা তখন জানতে চাইনি। আর ভুক্তভোগী কিংবা অন্য কেউ এখনও অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, একদফা মা-মেয়ের ওপর নির্যাতন চলার পর হারবাং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম চৌকিদার (গ্রাম পুলিশ) পাঠিয়ে তাদেরকে রশিতে বেঁধে তার কার্যালয়ে এনে আবার নির্মমভাবে নির্যাতন করেন। উপর্যুপরি নির্যাতন শেষে চেয়ারম্যানের লোকেরাই তদন্তকেন্দ্রে ফোন করে পুলিশ এনে তাদের হাতে মা-মেয়েকে মুমূর্ষু অবস্থায় তুলে দেন।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখার পর তাদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে চকরিয়া থানাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

আনন্দবাজার/শাহী/মতিন

সংবাদটি শেয়ার করুন