ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কক্সবাজার পেকুয়ায় এলজিইডি অফিসে নারী শ্রমিক নিয়োগে ঘুষ বানিজ্য!

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর(এলজিইডি), উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের অধিনে আরইআরএমপি-৩ প্রকল্পের অধীনে নারী শ্রমিক নিয়োগে সীমাহীন অনিয়ম, দূর্নীতি ও নিয়োগ দেওয়ার আশ্সাসে সাধারন নারী শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নারী শ্রমিকদের কাছ থেকে ঘুষের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় জড়িত পেকুয়া এলজিইডির কার্য সহকারী আয়াতুল হকের বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছে গত কয়েক দিন পূর্বে লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের নিয়োগ প্রত্যাশী অসহায় ৫ নারী। এদিকে ইউএনও অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদুল আলম চৌধুরীকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলী তার কার্যালয়ের কার্য সহকারী আয়াতুল হকের বিরুদ্ধে ৫ অসহায় নারী কর্তৃক দায়েরকৃত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন‘ অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করা হবে। তদন্তে টাকা নেওয়ার সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই কার্য সহকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পেকুয়ার ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগে শিলখালী ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড়ের ৫ অসহায় নারী যথাক্রমে, আবু তাহেরের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম, আবদু রশিদের স্ত্রী জন্নাতুল ফেরদৌস, মৃত কালুর স্ত্রী হাজেরা বেগম, জনু পাগলের স্ত্রী কুলছুমা বেগম, মৃত ইলিয়াছের স্ত্রী তৈয়বা, ও মফি উদ্দিনের স্ত্রী রৌশন আরা উল্লেখ করেছেন, তারা ১ নং ওয়ার্ড়ের অসহায়, বিধবা, খেটে খাওয়া নারী শ্রমিক।

পেকুয়া এলজিইডির কার্য সহকারী আয়াতুল হক ও শিলখালী ইউনিয়নের আরইএমপি-৩ প্রকল্পের সুপার ভাইজার ছৈয়দা বেগম তারা ৫ জনসহ আরো ৫ নারী শ্রমিককে প্রকল্পে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে প্রায় ১লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। তাদের নিয়োগ দেওয়ার আশ্বাসে দীর্ঘ দিন কালক্ষেপন করে আসছিল আয়াতুল হক। সর্বশেষ গত ৩০ জুলাই টাকা ফেরৎ দেওয়ার জন্য শিলখালী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আসেন আয়াতুল হক। কিন্তু তারা টাকা ফেরৎ না নিয়ে চাকুরীতে নিয়োগ দেওয়ার দাবী জানান।

জানা যায়, পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি ৩ (আরইআরএমপি-৩) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সারা দেশের ন্যায় পেকুয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নে (প্রতি ইউনিয়নে ১০ জন করে) মোর্ট ৭০ জন নারী শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে স্ব স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সুপারিশের ভিত্তিতে। তবে অভিযোগ উঠেছে, পেকুয়ার অধিকাংশ ইউনিয়নেই অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমেই নারী শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

পেকুয়া উপজেলায় চলতি বছরের জুন মাস থেকে ২০২৩ সালের জুন মেয়াদের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ/স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

সূত্রমতে, এ প্রকল্পে নারী কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্তা এবং নারীপ্রধান পরিবারের নারী শ্রমিক, ভূমিহীন বা শূন্য দশমিক ৫ একরের কম জমির মালিকানাসম্পন্ন এবং মেরামতের জন্য তালিকাভুক্ত সড়কের কাছে বসবাসকারী নারীদের অগ্রাধিকরা দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু পেকুয়ার অধিকাংশ ইউনিয়নে নারী শ্রমিক নিয়োগে এসব নির্দেশনা মানা হয়নি। কয়েকটি ইউনিয়নে দরিদ্র নারী শ্রমিকদের কাছ থেকে নিয়োগ পেতে ঘুণ নেওয়া হয়েছে। পেকুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্টরা পেকুয়া এলজিইডির অসাধু কর্মকার্তাদের ম্যানেজ করেই গোপনেই গত জুন মাসে নারী শ্রমিক নিয়োগের কাজ সম্পন্ন করেছে। ইউনিয়ন পরিষদ এবং পেকুয়া উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলীর কার্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে নারী শ্রমিক নিয়োগের কোন নোটিশ বা বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়নি।

এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলা প্রকৌলশীর কার্যালয়ে কর্মরত কার্য সহকারী আরইআরএমপি-৩ প্রকল্পের অর্গানাইজারের দায়িত্ব পালন করছেন। এই সুবাধে পেকুয়ার সাত ইউনিয়নের নারী শ্রমিক নিয়োগের নামে অনেক দরিদ্র নারীদের কাছ থেকে ৫-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদ সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে এলজিইডির ওই কার্য সহকারী ঘুষৈর টাকা আদায় করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে মুঠোফোনে পেকুয়া এলজিইডির কার্য সহকারী আয়াতুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত ঘুষ বানিজ্যেও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে শিলখালীর কিছু নারী চাকুরী না পেয়ে ক্ষোভের করণে অভিযোগ করেছেন।

তবে আয়াতুল হককে একজন বড় মাপের প্রতারক উল্লেখ করে শিলখালীর নারী শ্রমিক বিধবা হাজেরা বেগম জানান, পেকুয়া এলজিইডির কর্মচারী আয়াতুল হক একজন শ্রেষ্ট প্রতারক ও ঘুষখোর। তাকে চাকুরীতে নিয়োগ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে নিয়েছেন ১০ হাজার টাকা। টাকা নিয়েও নিয়োগ দেয়নি। এখন শুরু করেছেন নানান টালবাহানা। অসিহায় বিধবা নারী হাজেরা বেগম ঘুষখোর আয়াতুল হকের শাস্তি দাবি করেছেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদুল আলম চৌধুরীর কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জানান, পেকুয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নের নারী শ্রমিক নিয়োগে অনিয়ম দূর্নীতি হয়নি। চেয়ারম্যানদের সুপারিশের ভিত্তিতে নারী শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে পত্রিকায় রিপোর্ট না করতে এ প্রতিবেদকের কাছে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে রিপোর্ট হলে অফিসের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে।

আনন্দবাজার/শাহী/শহীদ

সংবাদটি শেয়ার করুন