ঢাকা | বুধবার
২৩শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জিকে শামীমের জামিন কেলেংকারীর, ডেপুটি অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে অভিযোগ

জিকে শামীমের জামিন জালিয়াতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে সুপ্রীম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌসী রূপার বিরুদ্ধে। এছাড়া দীর্ঘদিন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এসব অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

দুদকে দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়েছে, ১২ বছর ধরে আইন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌসী রুপা। ক্যাসিনো সম্পৃক্ত ঠিকাদার জিকে শামীমের হাইকোর্ট বিভাগে জামিন লাভে সহায়তা করে বিপুল পরিমাণ ঘুষ গ্রহণ করেছেন। হাইকোর্ট বিভাগের যে বেঞ্চে জিকে শামীমের জামিন হয়েছে সেই কোর্টে জান্নাতুল ফেরদৌসী রুপা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে কোর্টের দৈনন্দিন কার্য তালিকায় জিকে শামীম নামের পরিবর্তে এস এম গোলাম কিবরিয়া ছাপানোর ব্যবস্থা করেন তিনি।

অভিযোগে বলা হয়েছে, চলতি বছরের গত ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের একটি ডিভিশন বেঞ্চের কার্য তালিকায় জিকে শামীমের জামিনের আবেদনটি ইন রি টেন্ডার নম্বর ৫০৩৪২৫/২০২০ এবং আইটেম নম্বর ৩৩০ হিসেবে আসে। এরপর হাইকোর্ট বিভাগ রুল ও জামিন প্রদান করেন। এমনকি জামিন হওয়ার পর জামিন আদেশ বাতিলের জন্য আপিল বিভাগে আপিল দায়েরের জন্য জান্নাতুল ফেরদৌসী রুপা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। আর বিষয়টি প্রায় ১ মাস গোপন রাখেন তিনি। এরপর সবমহলে বিতর্কের জন্ম দিলে গত ৮ মার্চ হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চের সম্পূরক তালিকায় বিষয়টি ক্রিমিনাল কেস নং ৬২৬৪/২০২০ হিসেবে আসে এবং মহামান্য আদালত রূলটি ডিসচার্জ করেন এবং জামিন আদেশটি প্রত্যাহার করেন। জিকে শামীমের জামিনের বিষয়ে বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে তদন্তাধীন আছে।

অভিযোগের আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী হিসেবে দীর্ঘদিন বিভিন্ন পদে থেকে আসামী পক্ষের লোকজনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই এই কর্মকর্তার মূল লক্ষ্য। বস্তুত তার নেতৃত্বে দালাল চক্র এবং কতিপয় আইনজীবীসহ গড়ে উঠেছে দুর্নীতির এক বিশাল সিন্ডিকেট। তার ছোট বোন সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ছোট বোনের শাশুড়ি হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হওয়ার সুবাদে তিনি আদালতে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। ইতোপূর্বে মাদক সম্রাট আমিন হুদার জামিন কেলেংঙ্কারিতে ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক তদন্ত চলছে বলেও উল্লেখ করা হয়।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে বলা হয়েছে, ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রুপা ও তার পরিবার গত ১২ বছরে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। বর্তমানে ঢাকা ও আশেপাশে নিজ নামে ও বেনামে একাধিক ফ্লাট ও প্লটের মালিক হয়েছেন। শাহবাগে একটি বাণিজ্যিক স্পেস ক্রয় করে সেখানে গড়ে তুলেছেন একটি অত্যাধুনিক জেন্টস পার্লার। তিনি একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। লন্ডনে বিলাসবহুল বাড়ি কিনে সেখানে মেয়েকে ব্যারিস্টারি পড়াতে দিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে প্রচুর টাকা বিদেশে পাচার করে চলেছেন। এছাড়া তিনি তার নিজ বাড়ী বগুড়া জেলার ধনুট উপজেলার চৌকিগাছী ইউনিয়নের বৈগাতি গ্রামে গড়ে তুলেছেন প্রাসাদসম বিশাল বাগান বাড়ি। অন্যদিকে তার স্বামীর বাড়িতে তৈরি করেছেন সুরম্য অট্টালিকা। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে বেনামে রয়েছে অনেক টাকা। সম্পদের তথ্য গোপন করে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে আয়কর ফাঁকি দিচ্ছেন জান্নাতুল ফেরদৌসী রুপা।

এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌসী রুপা বলেন, জিকে শামীম তার নাম গোপন করে জামিন নেয়। আর জামিন দেয় আদালত। আমার কিছু করার নেই। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে আমি ৮ মার্চ কোর্টকে জানাই এবং জামিন বাতিল হয়। এখানে দুর্নীতি করলে আসামী পক্ষের লোকজন করেছে। সেজন্য আমি ১৬ মার্চ প্রধান বিচারপতির কাছে তদন্তের জন্য একটি চিঠিও দিয়েছি।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এই অভিযোগও মিথ্যা। আমি সৎ‌ ও সততার সাথে আমার দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমিও চাই যারা দুর্নীতি করেছে তাদের শাস্তি হোক।

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মোহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, আমরা ক্যাসিনো বিষয়ে আমাদের অনুসন্ধান ও তদন্ত করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সেটা আপনারা জানেন। আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ আসছে সেগুলো নিয়েও আমাদের টিম কাজ করছে। আমরা যাদের সম্পৃক্ততা পাবো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

আনন্দবাজার/ডব্লিউ এস

সংবাদটি শেয়ার করুন