ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে অস্বাভাবিক নির্মাণ ব্যয়!

বর্তমানে সরকার দেশের রেলের উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এজন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি এ খাতে একের পর এক নেওয়া হচ্ছে নানা ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প। এর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি।

জানা গেছে, এর আওতায় নির্মাণ করা হবে ঢাকা থেকে মাওয়া, ভাঙ্গা, নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার রেলপথ। তবে এ প্রকল্পে ব্যয় নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। এছাড়া প্রকল্পটির কিলোমিটার প্রতি নির্মাণ ব্যয়ের থেকে চলমান অন্যান্য প্রকল্পের তুলনায় অনেকগুণ বেশি।

বাংলাদেশ রেলওয়ের সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটির আওতায় ঢাকা-মাওয়া-যশোর রুটে সিঙ্গেল লাইন ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হবে এবং এ প্রকল্পে ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি)। জিটুজি ভিত্তিতে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে চীনের এক্সিম ব্যাংক।

তবে কঠিন শর্তের ঋণে (বায়ার্স ক্রেডিট) এ রেলপথটি নির্মাণে সিআরইসির সাথে চুক্তি করা হয় ২০১৬ সালের আগস্টে। ওই সময় প্রকল্পটির চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছিল ২৭ হাজার ৬৫২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ প্রকল্পে কিলোমিটারপ্রতি রেলপথ নির্মাণ ব্যয় পড়ছে ১২৮ কোটি ৪৯ কোটি টাকা। তবে রেলপথটি নির্মাণ ব্যয় আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।

এলওসির আওতায় চলমান আরেকটি প্রকল্প হচ্ছে ঢাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন এবং টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ডাবল লাইন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ। ৪৮ কিলোমিটার এ রেলপথ নির্মাণে চুক্তি হয় ২০১৮ সালের জুলাইয়ে।

জানা গেছে, এক হাজার ৩৯৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকায় যৌথভাবে এ রেলপথ দুটি নির্মাণ করছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এবং কল্পতরু গ্রুপ। এতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ২৯ কোটি চার লাখ টাকা। তবে ডুয়েলগেজ হওয়ায় এক্ষেত্রে ব্যয় খুলনা-মোংলা বন্দর রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের চেয়ে কিছুটা বেশি পড়ছে বলে জানান রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।

এর বাইরে ভারতের সাথে রেল সংযোগ স্থাপনে তৈরি করা হচ্ছে চিলাহাটি থেকে চিলাহাটি বর্ডার পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ। ৯ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণের চুক্তি মূল্য ৬৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অর্থাৎ কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে মাত্র সাত কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এই রেলপথটি নির্মাণ করছে বাংলাদেশের ম্যাক্স ইন্টারন্যাশনাল ।

এই ব্যাপারে, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রসঙ্গে জানান, সাধারণত কোনো রুটে রেলপথ নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যয় কিছুটা বেশি পড়ে। কারণ স্টেশন, বিল্ডিংসহ অন্যান্য সব অবকাঠামো নতুন করে নির্মাণ করতে হয়। পদ্মা রেল সংযোগ রুটটিও একেবারে নতুন। তাই ব্যয় কিছুটা বেশি পড়ছে।

যদিও রেলওয়ের সাবেক একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের মতো খুলনা-মোংলা বন্দর রেলপথও সম্পূর্ণ নতুন। তাই পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পকে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হিসেবে চিহ্নিত করার সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় এক দফা বাড়ানো হয়েছিল। এতে ঢাকা-মাওয়া-যশোর রেলপথ নির্মাণ ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ দেবে চীন। এবং বাকি ১৮ হাজার ২১০ কোটি ৩১ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। যদিও ২০১৬ সালে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নির্মাণ শুরুর আগেই প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গেছে চার হাজার ২৫৮ কোটি টাকা।

অপরদিকে প্রকল্পটির ব্যয় আরেক দফা ব্যয় বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলছে। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে অনুমোদন ছাড়াই ১ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা ব্যয় করতে চাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর মধ্যে ৬৪০ একর অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণে প্রয়োজন হবে ৯৪০ কোটি টাকা। এছাড়া ইউটিলিটি শিফটিং বাবদ অতিরিক্ত ২৫২ কোটি টাকা ও তৃতীয় পক্ষ পরামর্শক বাবদ আরও ২ কোটি টাকা দরকার হবে। এছাড়া প্রকল্পটির নকশা জটিলতার কারণে রেলপথ নির্মাণ ব্যয় আরও বাড়বে। এর বাইরে বাস্তবায়ন বিলম্বের কারণেও প্রকল্প ব্যয় বাড়তে পারে। রেলপথটি নির্মাণের শেষদিকে এসব ব্যয় সমন্বয় করা হতে পারে।

আনন্দবাজার/এইচ এস কে

সংবাদটি শেয়ার করুন