ক্রমশই আসহায় হয়ে পড়ছেন বন্যাদুর্গতরা। তিন দফা বন্যায় পানিবন্দি ১১ লাখেরও বেশি পরিবার এখন পুরোপুরি বিপর্যস্ত। মানুষের হাতে কাজ নেই। নগদ টাকাও নাই। বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র খাবার সংকট।
তাছাড়া বহু মানুষ এখনও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোলা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। অনেকে আশ্রয় নিয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, রাস্তার পাশে, আবার কেউ আশ্রয় নিয়েছে ব্রিজের ওপরে। পানিবন্দি মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, বন্যার পানি পুরোপুরি নামতে আরও সময় লাগবে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ দিন। এরপর মানুষজন নিজের ঘরে ফিরেই বসবাস শুরু করতে পারবে না। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর মেরামত করতে হবে। বাড়িঘরগুলোকে বসবাসের উপযোগী করে তুলতে হবে। কাজেই খুব সহজেই এই দুর্ভোগ মানুষের পিছু ছাড়ছে না।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সোমবার (৩ আগস্ট) পর্যন্ত দেশের ৩৩টি জেলা বন্যাকবলিত। বন্যায় পানিবন্দি ১১ লাখ পরিবারের ৫৪ লাখ ৪৮ হাজারের বেশি মানুষ। বন্যা আক্রান্ত উপজেলার সংখ্যা ১৫৮টি।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থায় রয়েছে জামালপুর জেলা। জামালপুর জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, সাতটি উপজেলার ৫৯টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। একই সঙ্গে ৮টি পৌরসভাও বন্যাকবলিত হয়েছে। সমগ্র জেলার ৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭০১ জন মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। ইতিমধ্যেই জেলার ১২ হাজার ৪২৮ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। সেখানকার বাড়িঘর, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা এখনও পানির নিচে। রাস্তা মাঠ-ঘাট এখনও জলমগ্ন। টানা দেড় মাসের বেশি সময় ধরে চলমান বন্যায় জেলার মানুষজন চরম কষ্টে আছেন।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, ঈদের দিনেই মাদারীপুরের শহর রক্ষা বাঁধে ধস নেমেছে। বাঁধের ২০ মিটার আড়িয়াল খা নদে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে লঞ্চঘাট, পুলিশ ফাঁড়ি, পুরান শহর প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সিলেটের জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি কমতে শুরু করেছে। ফলে জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু মানুষের দুর্ভোগ কমছে না।
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বন্যায় বাড়িঘর ছেড়ে ১২দিন যাবত রাস্তার পাশে পলিথিন দিয়ে ঘর বানিয়ে বসবাস করছি। ঘরে খাবার নাই। কোনও কাজও খুঁজে পাচ্ছি না। সরকারি সহায়তা বাবদ এ পর্যন্ত ১০ কেজি চাল পেয়েছিলাম। তা শেষ হয়েছে সেই কবে? আর শুধু চাল দিয়ে কি পেট বাঁচে?
সরকারের পক্ষ থেকে বানভাসি এসব মানুষের জন্য ১৪ হাজার ৪১০ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। নগদ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ৩০০ বান্ডিল ঢেউটিন বরাদ্দ করা হয়েছে। গোখাদ্য কেনা বাবদ বরাদ্দ করা হয়েছে ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। শিশুখাদ্য কেনা বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ১ কোটি ১১ লাখ টাকা।
আনন্দবাজার/শহক