নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ৬নং ওয়ার্ডের সুমিলপাড়া রেললাইন এলাকায় সিগারেট ধরাতে ম্যাচ চাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে দু’দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এতে কমপক্ষে ১৯ জন আহত হয়েছে। রোববার সন্ধ্যা ৭টা, রাত ১০টায় ও রাত ১২টায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল ও নারায়ণগেঞ্জর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
খবর পেয়ে র্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সংঘর্ষকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় পুলিশ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক কাউন্সিলরের ভাইসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে।
এসময় সংঘর্ষ চলাকালীন সময় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সোমবারও এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানায়, রোববার রাতে আদমজী রেললাইন এলাকায় কেরামবোর্ড দোকানের পরিচালক আসাদুলের কাছে সিগারেট ধরাতে ম্যাচ চেয়ে না পেয়ে আলী ও আবুল নামে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় ও মারমুখী হতে দেখা যায়।
পরে এ ঘটনার জের ধরে শাকিল গ্রুপ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। শাকিল নাসিক ৬নং ওয়ার্ডের ও জেলা বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি সিরাজ মন্ডলের সহযোগী। সে এলাকায় কিশোরগ্যাং লিডার হিসেবে পরিচিত।
এদিকে, সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের বিষয়টি নিয়ে নাসিক প্যানেল মেয়র-২ ও থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতির কার্যালয়ে দুই পক্ষকে ডেকে নিয়ে মিমাংসা করার চেষ্টা করা হয়।
সবাইকে এলাকার শান্তি শৃংঙ্খলা রক্ষায় শান্ত থাকতে অনুরোধ করেন মতি। এসময় মজিবর রহমান মন্ডলের নির্দেশে রাত ১০ টায় চাপাতি, হকিস্টিক, রামদা, এসএস পাইপ সহ প্যানেল মেয়র মতির অফিসের সামনেই শাকিলের নেতৃত্বে ফের হামলা চালানো হয়। শাকিল এলোপাথাড়ি চাপাতি দিয়ে বিভিন্ন জনকে কোপাতে থাকে এবং তাঁর সহযোগী আলী, আবুল, নুরা, সেন্টু, রুহুল কর্তৃক হামলায় আহত হয় আরিফ, আসাদুল, বেগম, আহসানউল্লাহ, আসিফ, রিদয়, সবুজ, ইবরাহিম, রাসেল সহ আরও বেশ কয়েকজন। হামলাকারীদের সাথে আরও যোগ দেয় বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত তাঁদের আরও সন্ত্রাসী বাহিনী। পুরো এলাকা জুড়ে বিরাজ করে থমথমে পরিস্হিতি।
অন্যদিকে আদমজী সোনামিয়া বাজার এলাকায় সিরাজ মন্ডলের সহযোগী কসাই বাবুর নেতৃত্বে যুুবলীগ ও তাঁতীলীগের অফিস ভাঙচুর করা হয়। এসময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এমপি শামীম ওসমানের ছবি ভাঙচুর করা হয়। লুট করা হয় অফিসে থাকা ৩২ ইঞ্চি এলইডি টিভি ও ডিশ ব্যবসার আনুমানিক এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা মূল্যের মালামাল। মেরে গুরুত্বর আহত করা হয় যুবলীগ অফিসের কর্মচারী সবুজ, মনির খাঁ, বিল্লাল সহ ৩ জনকে। এদের মধ্যে সবুজের অবস্হা আশঙ্কাজনক। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে অক্সিজেন সাপোর্টে রাখা হয়েছে। এ হামলায় কসাই বাবু ছাড়াও আরও অংশ নেয় সোনামিয়া বাজারের কিশোরগ্যাং লিডার কুট্টি, সালাউদ্দীন, জামাল কসাই, বর্গি নুরা, সোহেল, মাসুদ সহ অজ্ঞাত আরও ১০-১৫ জন।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে র্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নাসিক প্যানেল মেয়র-২ মতিউর রহমান মতি জানান, সিগারেটে আগুন ধরানোকে কেন্দ্র করে দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পরে আমার অফিসে এনে বিচার শালিসি করার সময় সিরাজ মণ্ডলের লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে প্রতিপক্ষের উপর হামলা চালায়। পরে আমি পুলিশ ডেকে এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাধ্য হই।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইশতিয়াক আশফাক রাসেল জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় সাবেক কাউন্সিলর সিরাজ মণ্ডলের ভাই ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মজিবুর রহমান মণ্ডলসহ ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
আনন্দবাজার/শাহী/আহসান