রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনার মধ্যে বন্যার ঘা, বেড়ায় সর্বস্বান্ত তাঁতিরা

একদিকে করোনা আরেকদিকে বন্যা। এর মধ্যে পড়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার উপক্রম পাবনার বেড়া উপজেলার তাঁতিদের। করোনায় কাজ না থাকায় মাস তিনেক প্রায় সকল তাঁতিই তাঁত বন্ধ রেখেছিলেন।

ঈদুল আযহার হাটকে সামনে রেখে সপ্তাহ তিনেক আগে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে ছিলেন কেউ কেউ। এজন্য সবাই কমবেশি তাঁত চালু করেছিলেন। কিন্তু তার কিছুদিনের মধ্যেই বন্যার পানি বৃদ্ধিতে উপজেলার মুজিববাঁধ তীরবর্তী বসবাস করা তাঁতিদের তাঁতঘরসহ বসতভিটা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে আত্মীয় বাড়িসহ অন্যের বাড়িতে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে এসব পরিবারের লোকজন।

বোববার (২৬ জুলাই) তাঁতি অধ্যুষিত হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নে ঘুরে একাধিক তাঁতির সাথে কথা বলে জানা যায়, এবারের বন্যায় বেড়া উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে মালদাপাড়া, পেঁচাকোলা, উত্তর পেঁচাকোলা, রাকশা, সাফুল্যাপাড়া, বাটিয়াখরা, নেওলাইপাড়া, সোনাপদ্মা, রূপপুর, খানপুরাসহ তাঁত সমৃদ্ধ অন্তত ১৫টি গ্রাম রয়েছে। করোনার কারণে গ্রামগুলোর ১০ হাজার তাঁতশ্রমিক এমনিতেই ধুঁকছিলেন। বন্যা তাঁদের একেবারে পথে বসিয়ে দিয়েছে। বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বসতঘরগুলোও।

এদিকে পানিতে ডুবে থাকায় তাঁতযন্ত্রগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। এখন তাঁরা জীবন জীবিকা নিয়ে অস্থির হয়ে পড়েছেন। তাঁতঘর, বসতঘর ও অকেজো তাঁত অন্যথায় সরিয়ে নেয়া ও মেরামতের চিন্তায়। এর সঙ্গে খাবার যোগাড়ের চিন্তা তো আছেই।

পেঁচাকোলা গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, হাতেগোনা দশ বারোটি তাঁত কারখানা এখনও একেবারে ডুবে যায়নি, কারখানার মধ্যে প্রায় হাঁটু পানি। পানির মধ্যেই লুঙ্গি তৈরীর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। তবে দুই তিন দিনের মধ্যেই এসব কারখানা ডুবে যাবে বলে জানান তাঁতিরা।

আরও পড়ুনঃ  ফের ‘শিশুবক্তা’ রফিকুল আটক

এই গ্রামের ছলেমান তাঁতি বলেন, করোনার জন্য এমনিতেই আমাদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। শেষ সম্বল তাঁত দুইটা নিয়ে বাঁচার আশা করিছিলাম। কিন্তু বন্যায় সেই আশাও শেষ হয়ে গেল।

তাঁতিদের অনেকেই নতুন করে মহাজন ও এনজিওসহ বিভিন্ন স্থান থেকে রঙ-সুতা কিনে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাঁতঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় তাঁদের তাঁতযন্ত্রই শুধু নষ্ট হয়নি, ঋণের টাকায় কেনা রঙ-সুতাও নষ্ট হয়েছে।

নেওলাইপাড়া গ্রামের রজব আলী আক্ষেপ করে বলেন, ঈদের হাটের কথা চিন্তা করে কয় দিন আমার পাঁচটি তাঁত থেকে লুঙ্গি বুনিয়ে বেড়া ও শাহজাদপুর বিক্রি করলাম। সপ্তাহখানেক হল তাঁত ঘড়ই ডুবে গেছে। ধার করে অনেক টাকার সুতা রঙ কিনেছিলাম সব শেষ। বউ-ছেলেমেয়ে নিয়ে অন্যের বাড়িতে উঠেছি, একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে গেলাম। এখন পর্যন্ত সরকারি কোন সহযোগিতাও পাইনি।

ইউএনও আসিফ আনাম সিদ্দিকী বলেন, বন্যাকবলিত অসহায় তাঁতিদের বিষয়টি আমি অবশ্যই গুরুত্বসহকারে দেখব। আসলে বন্যাকবলিতদের জন্য আলাদা কোনো ত্রাণ সহায়তা না এলেও ঈদ উপলক্ষে উপজেলায় বড় ধরনের ত্রাণ সহায়তা (ভিজিএফ) এর চাল এসেছে। বন্যাকবলিত এলাকাতেই এগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া হবে। এর মধ্যে অসহায় তাঁতিদের ব্যাপারে আরও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

আনন্দবাজার/ডব্লিউ এস/অলোক কুমার আচার্য্য

সংবাদটি শেয়ার করুন