শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রশি বেঁধে ছিনতাই, উড়াল সড়কের নতুন মরণফাঁদ

উড়াল সড়কের নতুন আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে রশি বেঁধে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দিয়ে ছিনতাই। এ যেন উড়াল সড়কের নতুন এক মরণফাঁদ। বিশেষ করে চট্টগ্রামের উড়াল সড়কে চলাচলকারী মোটরসাইকেল আরোহীরা গত কয়েক মাস ধরে এর শিকার হচ্ছেন।

আরিফ চৌধুরী চট্টগ্রামের একজন ব্যবসায়ী। চান্দগাঁওয়ের বাসায় ফেরার সময় সাধারণত আখতারুজ্জামান উড়ালসড়ক (ফ্লাইওভার) ব্যবহার করেন তিনি। গত ১৩ জুলাই বিকেলে লালখানবাজার থেকে মোটরসাইকেলে করে বাসার দিকে রওনা হন তিনি। উড়ালসড়কের ২ নম্বর গেট অতিক্রম করার পর হঠাৎ গাড়ি থেকে পড়ে যান।  কিছু বুঝে ওঠার আগেই অল্পবয়সী দুটি ছেলে ছুরি দেখিয়ে তাঁর মুঠোফোন, টাকাকড়ি কেড়ে নিয়ে দ্রুত মোটরসাইকেলে সটকে পড়ে।

আরিফ চৌধুরী জানান, রশিটি গলায় লেগে তিনি গাড়ি থেকে পড়ে যান। পড়ে যাওয়ার পর গলায় হাত দিয়ে দেখেন, অল্প অল্প রক্ত ঝরছে। নাইলনের চিকন রশিটি তাঁর গলায় বেঁধে আছে। দূর থেকে তিনি রশিটি দেখতে পাননি। তাঁর ধারণা, রশিটি আগে থেকে উড়ালসড়কের এক পাশে বেঁধে রাখা হয়েছিল। তিনি কাছাকাছি আসার পর আরেক পাশে বেঁধে টাঙিয়ে দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী ও পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, ছিনতাইয়ে জড়িত বেশির ভাগই মাদকাসক্ত এবং উঠতি বয়সের তরুণ। প্রায় দুই মাস ধরে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। দল বেঁধে ঘোরার ভান করে এরা উড়ালসড়কে অবস্থান নেয়। গাড়ি চলাচল কম থাকলে মোটরসাইকেল আরোহীদের নিশানা করে তারা। আশপাশে গাড়ি কম থাকলে আগে থেকে এক পাশে বেঁধে রাখা রশিটি দ্রুত আরেক পাশে বেঁধে দেয়।

আরও পড়ুনঃ  ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি

ব্যবসায়ী আরিফ চৌধুরীর ঘটনার পরদিনই ১৪ জুলাই একইভাবে উড়ালসড়কে ছিনতাইয়ের শিকার হন ব্যবসায়ী ইমরান চৌধুরী। এর আগের দিন ছিনতাই এর শিকার হন বহদ্দারহাটের মো. আবিদ নামের এক যুবক। ঘটনাগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে কিছুটা সতর্ক হন নিয়মিত যাতায়াতকারী যাত্রীরা।

সর্বশেষ ১৫ জুলাই মো. ফারুক নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী উড়ালসড়কে সুতা টাঙানো দেখে বাইক থামান। তখনই দেখেন দুই তরুণকে দ্রুত মোটরসাইকেল চালিয়ে চলে যেতে। পরে তিনি রশিগুলো সরিয়ে, সবাইকে সতর্ক করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন।

বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ থেকে পাওয়া হিসাবে, ফেব্রুয়ারি থেকে গত প্রায় ছয় মাসে চট্টগ্রাম নগরের চারটি উড়ালসড়কে রশি টানিয়ে ৫০টিরও বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এসব ঘটনায় থানায় মামলা হয়নি বললেই চলে। চলতি মাসে কেবল একটি মামলা হয়েছে পাঁচলাইশ থানায়। মামলার ঝামেলায় না যেতে চাওয়ায় অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচিত্র স্ট্যাটাস দিয়ে সবাইকে সাবধান ও সচেতন করার চেষ্টা করেন।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার আলী হোসেন বলেন, ফেসবুকে দেখে ঘটনার শিকার অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। জড়িতদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। পাশাপাশি সাদাপোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের টিম উড়ালসড়কে রাখা হয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

জয়নাল আবেদীন নামের এক ব্যক্তি জানান, জুন মাসের শেষের দিকে মোটরসাইকেল করে যাওয়ার সময় কদমতলী উড়ালসড়কে সুতায় আটকে পড়ে যান তিনি। এতে সামান্য আহত হন। এরপর তিনিও উড়ালসড়ক ব্যবহার করা কমিয়ে দিয়েছেন।

 

আনন্দবাজার/ডব্লিউ এস

সংবাদটি শেয়ার করুন