শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস করে কোটিপতি : সিআইডি

স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস থেকেই প্রতিবার মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এই ব্যাপারটি নিয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডি।

সিআইডি বলেন, সরকারি মেডিকেল, ডেন্টাল, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় চক্রের মূল হােতাসহ মোট চারজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- জসিম উদ্দিন ভুইয়া মুন্নু, পারভেজ খান, জাকির হোসেন দিপু এবং সামিউল জাফর সিটু।

গত ২০ জুলাই রাজধানীর মিরপুর থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের সময় প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মূল হোতা জসিমের কাছ থেকে দুই কোটি ২৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, দুই কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক এবং পারভেজের কাছ থেকে ৮৪ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করেছে সিআইডি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির সাইবার ক্রাইমের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সুমন কুমার দাস। এ সময় সেখানে সাইবার ক্রাইমের ডিআইজি মো. শাহ আলমসহ সিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পরে কারাগার থেকে তিন আসামিকে ভার্চুয়াল আদালতে উপস্থিত দেখানো হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় মিরপুর থানায় করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। অন্যদিকে তাদের পক্ষ থেকে রিমান্ড বাতিল করে জামিন চাওয়া হয়।

আসামিপক্ষের আবেদন নাকচ করে প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।

তাছাড়া অপর দুই আসামি সানোয়ার হোসেন ও মোহাইমেনুল ইসলাম বাঁধন এরইমধ্যে আদালতে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন বলে সিআইডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ  পাহাড়ি জনপদে বিশেষ বরাদ্দের দাবি

এএসপি সুমন কুমার দাস বলেন, ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে প্রথম তদন্ত শুরু করে সিআইডি। এ ঘটনায় করা মামলায় ১২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় সিআইডি, যার মাঝে গ্রেফতার ছিল ৪৭ জন। তাদের মাঝে ৪৬ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলা তদন্তকালে ২০১৮ সালে একটি চক্রের সন্ধান পায় সিআইভি। গত ১৯ জুলাই এস এম সানােয়ার হােসেন নামের একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ২০১৩, ২০১৫ ও ২০১৭ সালের মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য দেন তিনি ।

তার দেয়া তথ্যের উপরে সিপিসির পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলামের তত্ত্বাবধায়নে একটি দল ওই দিনই মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জসিম উদ্দিন ভুইয়া মুন্না, পারভেজ খান ও জাকির হাসান দিপুকে গ্রেফতার করে। আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র হিসেবে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ছাপাখানা থেকে মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষার পূর্বে শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করতেন।

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় ২০ জুলাই এজাহারনামীয় ১৪ জনসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে সিআইডি। তাদের মাঝে জসিমের কাছ থেকে ২ কোটি ২৭ লাখ সঞ্চয়পত্র, ২ কোটি ৩০ লাখ চেক এবং পারভেজের কাছ থেকে ৮৪ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করেন সিআইডি।

আরও পড়ুনঃ  নির্মাণের কিছুদিন পরই রাস্তার বেহাল দশা

সুমন কুমার দাস জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস থেকেই মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র একেরপর এক ফাঁস হয়েছে। প্রেসের মেশিনম্যান সালাম এবং তার খালাতো ভাই জসিম মিলে দেশজুড়ে একটি চক্র গড়ে তুলেছিলেন। চক্রটির মাধ্যমে শত শত শিক্ষার্থী টাকার জোরে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি হয়েছে। দীর্ঘদিনের অনুসন্ধানে পুরো চক্রটিকে চিহ্নিত করেছে সিআইডির তদন্তকারী দল।

সিআইডি আরও বলেন, ইতোমধ্যে মাস্টারমাইন্ড জসিম উদ্দিন ভূইয়াসহ চক্রের ১১ সদস্য সিআইডির সাইবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। তাছাড়া অধিদফতরের ক্ষমতাবান কর্তাদের মদদে প্রেস থেকে বহু বছর ধরে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করতেন মেশিনম্যান আবদুস সালাম। তার খালাতো ভাই জসিমের প্রধান কাজ ছিল দেশজুড়ে প্রশ্ন ছড়িয়ে দেয়া। এ কাজ করতে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্কও ছিল তার। দেশজুড়ে চক্রটির প্রায় অর্ধশত সহযোগীর খোঁজ পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

আনন্দবাজার/এফআইবি

সংবাদটি শেয়ার করুন