ঢাকা | শুক্রবার
১৩ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৩০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শ্রীপুরে বনের কাঠ পুড়িয়ে কয়লা উৎপাদন

গাজীপুরের শ্রীপুরে অনেক দিন বন্ধ থাকার পর তালতলী গ্রামের চুল্লিতে বনের কাঠ পুড়িয়ে কয়লা উৎপাদনেে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি চক্র এতে কাঠ পোড়ানোর কারণে চুল্লি থেকে কালো ধোঁয়ার নির্গত হয়ে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে স্থানীয়দের অভিযোগ অনেকেরই। ইতিপূর্বে বিগত ২০১৮ সালে অভিযান করে স্থানীয় প্রশাসন এসব চুল্লি গুড়িয়ে দিয়েছিল। এলাকাবাসীদের ভাষ্যমতে, বন বিভাগের শ্রীপুর রেঞ্জ অফিসের আওতায় তেলিহাটি, তালতলী ও সাইটালিয়া গ্রামের (সাইটমনিগড়) কিছুদিন পূর্বে এই সংরক্ষিত বনাঞ্চল গহীন অরণ্যে ঘেরা ছিল এখন আর এগুলো চোখে পড়ছেে না বনের প্রায়ই অংশই বন বিভাগের চোখের সামনেই জবর দখল হয়ে যাচ্ছে।

রাতের আধারে চুল্লিতে কয়লা তৈরি করে কাঠ চোরেরা বন কে সাবাড় করে দিয়েছে।আগুনে পুড়ে কয়লা উৎপাদন করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। এই চক্রের জড়িত রয়েছে তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ওয়ার্ড সদস্য নামধারি আওয়ামীলীগ নেতা জয়নাল হাজারী। তার সাথেই চুল্লি স্থাপন করেছেন জামাল উদ্দিন, জামান মিয়া, আজিজুলহক,জাকির হোসেন,মুজিবুর রহমান, ফিরুজ মিয়া ও নুরুল ইসলাম। ইতিপূর্বে স্থানীয় প্রশাসন অভিযান করে এসব চুল্লি ভেঙ্গে দিলেও করোনার লকডাউনের সময় ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে তারা।

গ্রামটি যেন এখন জলন্ত চুল্লির গ্রাম। তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেনসরকার জানান, সংরক্ষিত বনের গহিন অরন্যে ঘেরা এই তালতলি গ্রাম এখন আর আগের অবস্থানে নেই।একদিকে বনের গাছপালা উজাড় হয়ে বনভূমি দখল হচ্ছে অপরদিকে বনের কাঠ পুড়িয়ে কয়লা উৎপাদন করে ব্যবসা করছে একটি চক্র। এগ্রামটিতে অসংখ্য মানুষের বসবাস। এলাকাবাসী প্রতিবাদের কারনে ইতিপূর্বে একবার এসব চুল্লি ভেঙ্গে দিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। তবে ফের চুল্লি স্থাপন করা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। সাইটালিয়া গ্রামের আব্দুল কাদের অভিযোগ করেন,সংরক্ষিত বন অঞ্চলে যেসব প্রাণীদের বাস করার কথা ছিল তা এখন আর নেই। এসব চুল্লির পাশাপাশি বনের ভিতরও বনের কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।

আগুনের লেলিহান শিখায় প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উত্তপ্তহয়ে উঠে, এসব চুল্লির কালো ধোঁয়ার আচ্ছন্ন হয়ে থাকে স্থানীয় এলাকা। অনেক গাছপালা মারা যাচ্ছে,বসবাসের স্থান হারাচ্ছে প্রকৃতির প্রানীরা।জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে সমস্ত পৃথিবীতে নানা ধরনের কর্মসূচী চলমান থাকলেও আমরা নিজেরাই চোখের সামনেই প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস করছি।এসব অবৈধ কর্মকান্ডের বিষয়ে জরুরী ভিক্তিতে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক ওয়ার্ড সদস্য জয়নাল হাজারী জানান, দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের অনেকেই চুল্লি স্থাপনের মাধ্যমে কয়লার ব্যবসা করে আসছেন। তাদের দেখাদেখিতেই আমিও কয়েকটি চুল্লিস্থাপন করেছি। এগুলোর কোন অনুমোদন প্রয়োজন আছে বলে তার কিছু জানা নেই।

তবে বনবিভাগের কর্মকর্তাদের মাঝে মধ্যে কিছু দিতে হয়। শ্রীপুর উপজেলা বনকর্মকর্তা (ফরেষ্ট রেঞ্জার) আনিসুল হক জানান, সংরক্ষিত বন অঞ্চলের পাশে কেউ এভাবে কয়লা তৈরীর চুল্লি স্থাপন করতে পারেনা,এটা অবৈধ। তিনি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন। গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (এডি) আশরাফ উদ্দিন জানান,এসব কয়লা তৈরীর কারখানার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। জনসংখ্যার ঘনত্ব এলাকায় ধোঁয়া তৈরী করে পরিবেশ।দূষণ করে থাকলে তা উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ শামসুল আরেফিন জানান, যদি কেউ এসব চুল্লি আবার পুনরায় নির্মাণ করে এবং পরিবেশের দূষণ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং এসব চুল্লি ভেঙ্গে ফেলা হবে।

আনন্দবাজার/মহিউদ্দিন

সংবাদটি শেয়ার করুন