ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খামারীদের অত্যাচারে অতীষ্ট স্বরুপকাঠির দুই গ্রামের দেড় সহস্রাধিক মানুষ

স্বরূপকাঠিতে গরু, ছাগল ও মুরগী খামারীদের অত্যাচারে অতীষ্ট উপজেলার দক্ষিন পশ্চিম প্রান্তে দুই গ্রামের দেড় সহস্রাধিক মানুষ। ওই এলাকায় গড়ে ওঠেছে ৯ পোলট্রি ও গরু মোটাতাজাকরণ ডেইরী ফার্ম। মুরগীর খামারের নিচে জলাশয়ে চাষ করা হচ্ছে বিভিন্ন জাতের মাছ। ওই মাছেরে এক মাত্র খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে মুরগী ও গরু ছাগলের মল-মূত্র। খামারের নিচের জলাশয় গুলো খালের সাথে সংযুক্ত।

ফলে জলাশয়ের দূষিত পানি সবগুলো খাল ডোবা নালায় গিয়ে গোটা এলাকার পানি দূষিত করে ফেলে। তীব্র দুর্গন্ধ আর পানি দুষনের কারণে এলাকার মানুষের বসবাস দুরুহ হয়ে পড়েছে। যা জনস্বাস্থ্যেও জন্য অত্যন্ত ঝুকিপূর্ন। ওই খামার গড়ার পরিবেশ অধিদফতরের কোন অনুমোদন নেই। উপজেলা পশু সম্পদ বিভাগের সাথেও কোন যোগাযোগ নেই তাদের। সরেজমিনে লেবুবাড়ী ও কাটাপিটানিয়া গ্রামে গেলে এলাকাবাসী জানান তাদের দুর্ভোগের নানা কথা।

উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন-পশ্চিম প্রান্তের দারিদ্র পীড়িত কাটাপিটানিয়া ও লেবুবাড়ী এলাকায় রয়েছে বড় আকারের ৯ টি খামার। এর মধ্যে বড় শাহীন পোলট্রি ও মোটাতাজাকরন ডেইরী ফার্ম। ৫ একর কৃষি জমির ওপর ২০০৫ সালে খামারটি গড়ে তুলেছেন মিয়ারহাট বাজারের মুরগী ব্যবসায়ী শাহিন মিয়া। ওই খামারে গিয়ে দেখাযায় নানা অনিয়ম। দুর্গন্ধে ঢোকাই কষ্ট সাধ্য। ওই খামাওে বর্তমানে ৭ হাজার লেয়ার মুরগীর পাশাপাশি ২১ টি মোটা তাজা করনের গরু, ৩২ টি বড় জাতের ছাগল রয়েছে। মুরগীর খামারের নিচে জলাশয়ে চাষ করা হচ্ছে মাছ। গরু ও ছাগলের খামারের মলমুত্র ও বর্জ নালা দিয়ে ওই জলাশয়ে ফেলা হচ্ছে।

লেবুবাড়ী এলাকার গৃহবধু আরতি মিস্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ১৫ টি বছর ধরে আমারা অসহায়ের মতো বসবাস করছি। বিষ্ঠার দুর্গন্ধে থাকা যায় না। রোদ উঠলে বাতাসে গন্ধ আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে। একই গ্রামের মিনতি বালা বলেন, খালের পানিতে গোসল করতে পারি না, পানির গন্ধে বমি আসে। গোসল করার পরে শরীর চুলকাতে থাকে। গন্ধে তৃপ্তি নিয়ে খাওয়া দাওয়া করা যায় না। একদিকে করোনার ভাইরাস নিয়ে ভয়ে ভয়ে আছি অন্যদিকে বিষ্ঠার দুর্গন্ধে ঘুমাতেও কষ্ট হয়। কাটাপিটানিয় এলাকার স্বপন হালদার বলেন, এলাকায় ৯ টি খামার আছে। এর সবগুলোই ইন্দুরহাট মিয়ারহাট এলাকার মালিকদের। তারা এ এলাকায় থাকেন না ফলে সমস্যাগুলো তাদেও ভোগ করতে হয়না। এর মধ্যে দুইটি খামারের পানি বড় নদীতে যায় বাকী গুলোর পানি ৪ টি খাল, পুকুর ও ডোবানালায় যায়। ফলে পানি দূষিত হয়ে যায়। দুর্গন্ধে চলাচল ও এলাকায় বসবাস করা দুরুহ হয়ে গেছে।

এ বিষয় খামার মালিক শাহিন মিয়া বলেন,আমি যে ভাবে খামার গড়েছি তাতে করো কোন ক্ষতি হয় না। মুরগির বিষ্ঠা মাছে খেয়ে ফেলে এবং গরুর মলমূত্র পানিতে অক্সিজেন তৈরি হয়। আমার কারণে অনেক বেকার লোকের কর্ম সংস্থান হয়েছে।

এ বিষয় নেছরাবাদ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাডা. মো. শওকত আলী বলেন, উপজেলায় ৪২৭টি গরুর ছোটবড় খামার এবং মুরগির খামার্র আছে সহস্রাধিক। পরিবেশ দুষনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খামারিরা যখন ফার্ম করে তখন যদি আমাদের সাথে যোগাযোগ করে তাহলে আমার পরামর্শ দিতে পারি, তারা কি ভাবে পরিবেশ বান্ধব ফার্ম তৈরি করতে হয়। সরকারের একটা নিয়ম আছে যে কোন খামার তৈরির পুর্বে প্রাণি সম্পদ ও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু এখানে তার বিপরীত। তবে তিনি খামারিদের দিক নির্দেশনা দিতেছি যাতে পরিবেশ দুষিত না হয়। তার পরেও শাহিন মিয়াকে বলা হয়েছে পরিবেশ যাহাতে দুষিত না হয় সেদিকে নজর দিতে বলেছি। তার খামারে বায় গ্যাস প্লান তৈরি করার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছি।

আনন্দবাজার/শাহী

সংবাদটি শেয়ার করুন