সম্প্রতি দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের জলকপাট নিয়ন্ত্রনে স্থাপিত অটোমেশন অপারেটিং সিস্টেমের রাউটার রহস্যজনক চুরি হবার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১১ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোডের তিস্তা ব্যারাজ যান্ত্রিক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সামছুজ্জোহা।
জানা যায়, সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ফাস্টকম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক অটোমেশন অপারেটিং সিস্টেমটি চালু করা হয়েছিল তিস্তা ব্যারাজের জলকপাট নিয়ন্ত্রনের জন্য।
এদিকে, ২০১৮ সালের জুন মাসে এটি স্থাপন দেখানো হয়। স্থাপনের পর ফাস্টকম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি অ্যাপসের মাধ্যমে তিস্তা ব্যারেজের ৫২টি জলকপাট অটোমেশন অপারেটিং সিস্টেমটি চালু করেন। সেখানে মোট ৭টি রাউটার স্থাপন করা হয়। বর্তমান অবস্থায় ১৮ মাস যেতে না যেতেই অটোমেশন অপারেটিং সিস্টেমটি সঠিকভাবে কাজ করেনি। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ফাস্টকম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অটোমেশন কাজের চুক্তি শেষ হয়ে যায়। পাশাপাশি পুরো বিল তুলে নেয় বলেও গোপন সুত্রে জানা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিস্তা ব্যারেজের মোট জলকপাট ৫২টি। এর মধ্যে মূল নদীর পানি প্রবাহের জন্য রয়েছে ৪৪টি ও সেচ ক্যানেলে পানি সরবরাহের জন্য রয়েছে ৮টি জলকপাট। তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণের তৎকালীন সময় প্রতিটি জলকপাট নিয়ন্ত্রণের জন্য বিদ্যুৎচালিত সুইট সিস্টেম ও ম্যানুয়াল সিস্টেম রাখা হয়। ২০০৩ সালে তিস্তা ব্যারেজের জলকপাট নিয়ন্ত্রণে বিদ্যুৎচালিত সুইচ সিস্টেম বিকল হয়ে যায়। পরে বিকল হয়ে যাওয়া তিস্তা ব্যারাজের বিদ্যুৎচালিত সুইচ রুম নতুনভাব স্থাপন করতে নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের যান্ত্রিক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সামছুজ্জোহার প্রকল্প তৈরি করেন। যেখানে ব্যয় ধরা হয় প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা।
অটোমেশন অপারেটিং সিস্টেম ঠিকমতো কাজ না করার কারণে এর ৭টি রাউটারের মধ্যে ৬টি রাউটার পরিকল্পিতভাবে চুরি করার কথা জানানো হলেও এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেননা তিস্তা ব্যারেজ হলো কেপিআই ওয়ান। এখানে ২৪ ঘন্টায় আনসার বাহিনী ও পুলিশ টহল থাকে। এ অবস্থায় কি ভাবে মূল্যবান রাউটার চুরি হতে পারে! তাছাড়া ৬টি রাউটার চুরি দেখিয়ে অপর একটি রাউটার খুলে রাখা হয় বলেও গোপন সুত্রে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিস্তা ব্যারাজ যান্ত্রিক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সামছুজ্জোহা জানান, অ্যাপসের মাধ্যমে অটোমেশন অপারেটিং সিস্টেম চালু করা হয়। ব্যারেজের উপর যন্ত্রপাতির সাথে ৭টি রাউটার স্থাপন করা ছিল। রাউটার গুলো কি ভাবে চুরি হয়েছে, না কেউ খুলে নিয়ে গেছে তা নিয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এ ব্যাপারে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছি। আমরাও বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। তার দাবি ঠিকাদারকে চুড়ান্ত বিল প্রদান করা হয়নি।
উল্লেখ্য, এ ব্যাপারে হাতীবান্ধা থানায় যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, দোয়ানী আইসি ক্যাম্পে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের যান্ত্রিক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সামছুজ্জোহা একটি লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। এ বিষয়ে তাদের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরে মামলার জন্য এজাহার চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটি তারা ১১ জুলাই পর্যন্ত দায়ের করেননি।
আনন্দবাজার/শাহী/সুজন