শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নদী ভাঙ্গনে ছোট হচ্ছে মেহেন্দিগঞ্জের মানচিত্র

ইউসুফ আলী সৈকত, বরিশাল জেলা প্রতিনিধি

বরিশাল জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরুপ নীলাভূমি মেহেন্দিগঞ্জ। ১টি পৌরসভা ও ১৫ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই উপজেলা। উত্তরে মেঘনা নদীর ওপাড়ে লক্ষীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা, দক্ষিণে বরিশাল জেলা সদর উপজেলা, পূর্বে ভোলা জেলার সদর উপজেলা ও পশ্চিমে হিজলা ও মুলাদী উপজেলা। মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন জনপদ। বরিশাল বিভাগের অন্যতম বানিজ্যকেন্দ্র ও জনপদটি এক সময় ঘাট পাতারহাট নামে ব্যাপক পরিচিত ছিল। এই উপজেলায় আছে জমিদার বাড়ি, তাজমহল সজ্জিত মসজিদসহ অনেক ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা মরহুম মহিউদ্দিন আহাম্মেদ, একুশের গানের রচয়িতা আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী, কবি আসাদ চৌধুরী, বিচারপতি আব্দুর রহমান চৌধুরীর মত বিশ্ব জননন্দিত বাংলার খ্যাতিমান বরেণ্য ব্যক্তিদের জন্ম এই মেহেন্দিগঞ্জে। প্রতি বছর এই উপজেলার প্রায় সবগুলো ইউনিয়নই নদী ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে।

এই অব্যাহত নদী ভাঙ্গনের ফলে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে উপজেলার মানচিত্র। ইতিপূর্বে উলানিয়া মেঘনা নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের ফলে ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ি, উলানিয়া বাজার, উলানিয়া করনেশন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বালিকা বিদ্যালয়সহ ভাঙ্গনকবলে থাকা কয়েকটি গ্রাম রক্ষা পেয়েছে।

চলতি বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে পানি নেমে আসায় রাক্ষুসী মেঘনা, গজারিয়া, তেতুলিয়া ও ইলিশা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশী নদী ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে মেহেন্দিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রুকুন্দি ও সাদেকপুর গ্রাম। এখানে প্রতিদিনই নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে কোন না কোন বসত বাড়ি ও ফসলি জমি।

আরও পড়ুনঃ  জয়পুরহাটে মাদক মামলায় একজনের যাবজ্জীবন

এছাড়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের লেঙ্গুটিয়া, শিন্নিরচর, চরশেফালী, ভাষানচর ইউনিয়নের বাগরজা, লঞ্চঘাট এলাকা, চরগোপালপুর ইউনিয়নের আমীরগঞ্জ রাস্তার মাথা, গাজীরচর, গোবিন্দপুর ইউনিয়নের তেতুলিয়া, আলীমাবাদ ইউনিয়নের মাঝকাজী, গাগুরিয়া, শ্রীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর বাজার, বগিরচর এবং উলানিয়া, চানপুর, চর এককরিয়া ও দড়িরচর খাজুরিয়া ইউনিয়নে অব্যাহত নদী ভাঙ্গনের ফলে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকার লোকজন এরই মধ্যে বসত বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। অনেকে আবার সড়কের পাশেই খড়কুটো দিয়ে ছাপরা ঘর বানিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

সচেতন মহল জানান, নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনই কোন কার্যকরি ব্যবস্থা না নিলে হারিয়ে যেতে পারে মেহেন্দিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন হাট-বাজার, মাধ্যমিক-প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, বসত বাড়ি, ফসিল জমিসহ গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা। নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে অচিরেই একটি কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন এলাকাবাসী।

সংবাদটি শেয়ার করুন