ভালো নেই কক্সবাজারের সৈকত পাড়ের ঝিনুক কন্যা খ্যাত সংগ্রামী রাফিয়া ও তার পরিবার।করোনাকালে সব ধরনের আয় রোজগারের সুযোগ বন্ধ থাকায় অভাব অনটনের কারনে খেয়ে না খেয়ে এক প্রকার মানবেতর জীবনযাপন করছে পরিবারটি।এমনটাই জানিয়েছেন রাফিয়ার পরিবার।
রাফিয়ার মা রহিমা বেগম জানান, করোনাকালীন সময় কক্সবাজার পৌরসভা থেকে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে মোস্তাক নামের একজন চার কেজি চাউল, এক কেজি ডাল,ও এক কেজি আলু দিয়েছিলেন তাদের। এর পর বিভিন্নসময় সহায়তার নামে একাধিবার আইডিকার্ডসহ বিভিন্ন তথ্য নিলেও কোন ধরনের সহায়তা পাননি পরিবারটি।
অদম্য রাফিয়া জানালেন, সহযোগীতার আশ্বাস দিয়ে মিডিয়া কাভারেজ নেয়ার পর যোগাযোগ করেনি কেউ। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও আর সাড়া দেননি প্রতিশ্রুতি দাদারা। তাই করোনাকালীন সময় খেয়ে না খেয়ে অনাহারে দিন কাটছে তাদের। সামনে করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও তার পড়াশোনা নেই শংঙ্কা প্রকাশ করেন রাফিয়া।
কক্সবাজারের সৈকত পাড়ের কলাতলীর ঝিরঝিরি পাড়ার আবদু করিমের কন্যা সংগ্রামী রাফিয়া সৈকতে ঝিনুক বিক্রি করে তার অসুস্থ বাবার চিকিৎসা ও সংসারের খরচ চালাতেন। পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছিলেন তার পড়াশোনাও। কিন্তু গত বছর মার্চের দিকে একজন পর্যটক রাফিয়ার ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে আপলোড করে দিলে তা ভাইরাল হয়ে যায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালের কারনে অন্ধকার নেমে আসে রাফিয়াদের পরিবারের। বন্ধ হয়ে যায় সৈকতে রাফিয়ার ঝিনুক বিক্রি এবং তারই স্কুল যাওয়া আসা। সে সাথে রাফিয়ার অসুস্থ বাবার চিকিৎসাও।
ফেইসবুক ব্যবহারকারী রাফিয়াকে নিয়ে হলিউড বলিউডের বিখ্যাত সুন্দরী নায়িকাদের
চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন।এসব নায়িকাদের সঙ্গে রাফিয়ার ছবি পোস্ট করে লিখেন কে বেশি সুন্দর? কক্সবাজারের ঝিনুক বিক্রেতা রাফিয়া না ইন্ডিয়ার ক্যাটরিনা? অথবা কার হাসি বেশি সুন্দর ইত্যাদি।
পরে এই প্রতিবেদকের “ফেইসবুকে ভাইরাল হয়ে বিপদে পরিবার”বাবার চিকিৎসার জন্য ঝিনুক হাতে সৈকতে ফিরতে চায় রাফিয়া শিরোনামে করা একটি প্রতিবেদন ব্যাপকভাবে আলোচনায় চলে আসে রাফিয়া।
মাত্র ১০ বছর বয়সে দারিদ্র্যতার সঙ্গে লড়াই করে লড়ে যাওয়ার ঝিনুক বিক্রেতা অদম্য রাফিয়ার সংগ্রাম হৃদয় নাড়া দেয় দেশের সব শ্রেণি পেশার মানুষের। এরই প্রেক্ষিতে দেশবিদেশ থেকে আসতে থাকে একের পর এক রাফিয়ার পরিবারকে সহযোগীতার আশ্বাস।
ওইসময় রাফিয়াদের পরিবারকে পর্যাপ্ত সহায়তার ঘোষণা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছেন অনেকেই। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই সহায়তা তো দূরের কথা যোগাযোগই করেননি বলে জানাগেছে।
বিশেষ করে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের পরিচালক ও দেশের শীর্ষ এক ইউটিউবার এবং স্থানীয় এক যুব নেতা তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী পরিবারটিকে আজীবন সহায়তার ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছিলেন। কিন্তু তারা কেউ কথা রাখেনি বলে জানিয়েছেন রাফিয়ার বাবা আবদুল করিম।
আবদু করিম জানান,স্থানীয় যুব নেতা ও পর্যটন ব্যবসায়ী তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী রাসেল তাদের পুরো পরিবারকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান। রাফিয়া ও তার ভাই আরফাতকে দেশে পড়তে না চাইলে প্রয়োজনে বিদেশে পাঠিয়ে ডিগ্রী অর্জনের সম্পূর্ণ খরচ বহনের পাশাপাশি সাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত পরিবারটি পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। বিষয়টি ওই সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপক হারে প্রচার পায়।
কিন্তু নির্বাচনে হেরে গেলে ওইদিনের পর থেকে আর কখনো যোগাযোগ করেননি কাজী রাসেল। তবে ওদিন এক বস্তা চাউল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী কিনে দিয়েছিল বলে জানান আবদু করিম।
এদিকে দেশের শীর্ষ ইউটিউবার তৌহিদ আফ্রিদি রাফিয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন দাবি করেছিলেন মজার টিভির ইউটিউব চ্যানেলের মালিক মাহসান স্বপ্ন। তিনি লাইভ এসে আফ্রিদির বরাদ দিয়ে এ তথ্য দিয়েছিলেন।
এর পরও বিভিন্ন গণমাধ্যমে আফ্রিদির প্রশংসা করে খবরও প্রচারিত হয়।
কিন্তু রাফিয়ার পরিবার জানান তৌহিদ আফ্রিদি নামের কেউ তাদের সাথে যোগাযোগ করেননি এবং কোন ধরনের সহায়তাও করেননি। অথচ ব্যাপক হারে প্রচার পেয়েছে তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা সহায়তা করেছেন।
রাফিয়ার বাবা আবদু করিম জানান ওইসময় দেশবিদেশ থেকে সর্বমোট ৪০ হাজার টাকা মত সহায়তা পেয়েছিলেন তারা।
বিষয়টি জানতে ইউটিউবার তৌহিদ আফ্রিদি ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। কাজী রাসেল কারাগারে থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
আনন্দবাজার/শাহী/জসীম