ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আধুনিক পাটকল নির্মাণে চাকরি পাবে অভিজ্ঞরা: প্রধানমন্ত্রী

সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত যেসব পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, বিশ্বব্যাপী সেই পাটের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সেগুলোকে সময়োপযোগী, আধুনিক করে গড়ে তোলার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি আশ্বস্ত করে জানান, নতুন আঙ্গিকে পাটকলগুলো চালু হলে অভিজ্ঞকর্মীদেরই সেখানে চাকরি হবে, এজন্য তাদেরকে আধুনিক প্রযুক্তির ওপর প্রশিক্ষণও দেয়া হবে।

এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে থাকার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকল সম্প্রতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য এসব পাটকলের প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিকের শতভাগ পাওনা মিটিয়ে দিয়ে তাদের চাকরি অবসায়ন করা হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

এরই মাঝে শ্রমিকদের জুন মাসের বেতনভাতা পরিশোধ করতে ৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দও দিয়েছে সরকার।

পরবর্তী সময়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের মাধ্যমে পাটকলগুলো পুনরায় চালুর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

সংসদের অধিবেশনে শেখ হাসিনা জানান, “পরিবেশ রক্ষার জন্য যেহেতু সিনথেটিক থেকে সকলেই এখন মুক্তি চায় সেখানে পাট হচ্ছে এরই একটা বিকল্প। সেখানে বিশ্বব্যাপী আমাদের একটা বিশাল সম্ভাবনা রয়ে গেছে। কিন্তু তার জন্য আমাদের ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে সময়োপযোগী করতে হবে, আধুনিক করতে হবে, নতুন করতে হবে।

তিনি আরও জানান “সেজন্য আমরা আমাদের পাটের যারা শ্রমিক, তাদের যে মজুরির টাকা পাওনা-দেনা যা ছিল, সব মিটিয়ে আমরা একবারে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা তাদের জন্য রেখে দিয়েছি। সেখানে সব টাকা তাদের হাতে দেব না। কারণ নগদ টাকা দিয়ে দিলে তখন দেখা যাবে মেয়ের জামাই, ভাই, ভাতিজা, আত্মীয়-স্বজন সব এসে হুমড়ি খেয়ে পড়বে এবং ভাগ চাইবে।”

তাছাড়া যে প্রক্রিয়ায় শ্রমিকদের পাওনা মেটানো হবে সভায় তাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

“আমি বলেছি অর্ধেকটা সঞ্চয়পত্র করে দেব। পারিবারিক সঞ্চয়পত্র, যেখানে তারা ১১ শতাংশের মতো পাবে। সেখানে ভালো টাকা প্রতি তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক পাবে, যা প্রতিদিন সে কাজ করে মাসে মজুরি পেত, তার চেয়ে বেশি টাকাই পাবে। সেটা আমরা হিসেব করছি, যা পাওনা ছিল সেটা আমরা সব শোধ করে দেব।”

নতুন করে পাটকলগুলো চালুর পরিকল্পনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা জানান, “আমরা এটাকে নতুনভাবে শুরু করব। এখানে যারা আগ্রহ প্রকাশ করবে তাদেরকেই আমরা আবার ট্রেনিং দেব। ট্রেনিং দিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন করে তাদেরকে তৈরি করব। পাটকল চালু হলে অভিজ্ঞতা যাদের আছে, তারাই নতুন করে আবার চাকরি পাবে।”

পাশাপাশি বিশ্বে বাংলাদেশের পাট ও পাটপণ্যের বাজার ধরে রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি জানান, “নিজেরা চেষ্টায় জোগাড় করতে পারে না। এইভাবে তো একটা ইন্ডাস্ট্রি আসলে চলতে পারে না।

“আর এই ইন্ডাস্ট্রিগুলো হচ্ছে দেশের সব থেকে পুরনো। সেই ষাটের দশকে, পঞ্চশের দশকে করা। এই ইন্ডাস্ট্রি দিয়ে আসলে লাভ করাও তেমন সম্ভবও না। সেজন্য আমরা চাচ্ছি এটাকে আবার নতুনভাবে তৈরি করতে। কারণ সামনে পাটের একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। পাট আমাদের অর্থকরী ফসল। পাট একদিকে যেমন কৃষিপণ্য অপরদিকে তেমন ইন্ডাস্ট্রি, দুটোই।”

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পাটের জন্মরহস্য উন্মোচন, গবেষণার মাধ্যমে বিভিন্ন পাটজাত পণ্য আবিষ্কারের কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান জানান, “সেগুলো আমাদের উৎপাদন করতে হবে। তাছাড়া, সেগুলো আমাদের দেশের কাজে লাগবে, বিদেশে রপ্তানি হবে।”

আনন্দবাজার/শাহী

সংবাদটি শেয়ার করুন