পাবনার চাটমোহর উপজেলার এম কে আর আহাম্মাদীয়া দাখিল মাদ্রাসায় নৈশ প্রহরী ও আয়া নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অপচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, আওয়ামীলীগ নেতা এবং সুপারিনটেন্ডেন্ট’র বিরুদ্ধে। সম্প্রতি নিয়োগ বাণিজ্যের একটি কথোপকথন (অডিও রেকর্ড) ফাঁসের ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
মাদ্রাসার সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম মল্লিক এবং এক চাকুরী প্রত্যাশী ও তার ভাইয়ের সাথে ১৪ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের অডিও রেকর্ডে নিয়োগ বাণিজ্যের স্পষ্ট কথোপোকথন এলাকার মানুষের ফোনে ফোনে ঘুরছে। এখানে শুধু মাদ্রাসার সভাপতি-ই নন, মাদ্রাসার সুপারিনটেন্ডেন্ট মাওলানা আব্দুল লতিফ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য বিএনপি নেতা লিটন বিশ্বাসের বিরুদ্ধেও নিয়োগ দিতে চাকুরী প্রত্যাশীদের কাছ থেকে নিয়োগের আগেই টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অডিও রেকর্ডিং ও সংশ্লিষ্ট তথ্যে জানা গেছে, এম কে আর আহাম্মাদীয়া দাখিল মাদ্রাসার শুন্য পদে নৈশ প্রহরী ও আয়া পদে দরখাস্ত আহবান করে গত ২৬ মার্চ স্থানীয় পত্রিকায় একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর দু’টি পদের বিপরিতে বেশ কিছু নারী ও পুরুষ আবেদন করেন। এরপর মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মল্লিক ও মাদ্রাসা সুপারিনটেন্ডেন্ট মাওলানা আব্দুল লতিফ আবেদনকারী বেশ কয়েকজনকে চাকুরী দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আলাদা আলাদাভাবে অগ্রীম টাকা গ্রহন করা শুরু করেন বলে আবেদনকারীদের অভিযোগে জানা গেছে।
এদিকে, অডিও রেকর্ডটি নিয়ে যাচাই বাছাই ও অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হওয়া গেছে সেখানে মাদ্রাসার সভাপতি নজরুল ইসলাম মল্লিক, চাকুরী প্রত্যাশী রতনপুর গ্রামের ফারহানা খাতুনের স্বামী মুকুল হোসেন ও তার ভাই আবুল কাশেম এর কথোপকথন রয়েছে। যেখানে সুপারিনটেন্ডেন্ট মাওলানা আব্দুল লতিফ ও সদস্য লিটন বিশ্বাসের নামও উঠে এসেছে কথোপকথনে।
চাকুরী প্রত্যাশীদের মধ্যে রতনপুর গ্রামের রজনী খাতুনের স্বামী আব্দুর রহিম জানান, ভবিষ্যতের চিন্তা করে স্ত্রীকে ওই মাদ্রাসায় আয়া পদে চাকুরী নিয়ে দিতে সভাপতি ও সুপারিনটেন্ডেন্ট’র সাথে কথা বলি। তারা আশ্বাস দিয়ে আমার কাছ থেকে ইতিমধ্যে দুই লাখ টাকা নিয়েছেন। ব্যবসার পুঁজি দিয়ে, জমি ও গরু বিক্রি করে তাদের টাকা দিয়েছি। আমার মতো কয়েকজনের কাছ থেকে তারা টাকা নিয়েছে। এখন শুনছি তারা অন্যজনকে নিয়োগ দিবে। এখন আমার কি হবে, ভেবে পাচ্ছি না।
আরেক চাকরী প্রত্যাশী রতনপুর গ্রামের ফারহানা খাতুনের স্বামী মুকুল হোসেন জানান, আমার স্ত্রীর জন্য আমি ও আমার এক ভাই মাদ্রাসার সভাপতি নজরুল মল্লিকের কাছে গিয়েছিলাম। যে অডিও রেকর্ড শোনা যাচ্ছে সেখানে আমাদের সাথে তার কথা হয়। তাকে অনুরোধ করলেও তিনি ৯ লাখের কম দিলে নিয়োগ হবে না বলে জানান। তার আগে প্রথমে মাদ্রাসার সুপার আব্দুল লতিফ নিয়োগ দেয়ার আশ্বাস দিয়ে দুই লাখ টাকা নিয়েছেন। এমন অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার বলে দাবি করেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম মল্লিক বলেন, নিয়োগের বিষয়ে কিছুই জানি না। মাদ্রাসার সুপার নিয়োগ দিচ্ছে। কারা কি কারণে রেকর্ড করেছে আমি জানি না। অডিও রেকর্ডে তার কথা কেন জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, ওই অডিও রেকর্ডে তার কোনো কন্ঠ নেই। তবে তার কন্ঠ কম্পিউটারে নকল করে কেউ একাজ করতে পারে বলে দাবি করেন তিনি।
মাদ্রাসার সুপারিনটেন্ডেন্ট মাওলানা আব্দুল লতিফ মোবাইল ফোনে বলেন, এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না, এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নাই। এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজী হননি। ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য লিটন বিশ্বাস বলেন, তিনি কিছু জানেন না। এ বিষয়ে তার নাম না জড়ানোর অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মুলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি রাশিদুল ইসলাম বকুল বলেন, সামান্য আয়া আর নৈশ প্রহরী নিয়োগে যদি দশ লাখ টাকা ঘুষ নেয়া হয় তার চেয়ে দু:খজনক আর কি হতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আর মাদ্রাসার সভাপতি যেহেতু আওয়ামীলীগের এক নাম্বার ওয়ার্ডের সভাপতি, সেকারণে দলীয় সভা ডেকে সবার মতামতের ভিত্তিতে অভিযোগ প্রমানীত হলে তার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: মগরেব আলী বলেন, ওই মাদ্রাসার নিয়োগের বিষয়ে শিক্ষা অফিসের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। নিয়োগ বিষয়ে যে কথাবার্তা তারা করেছেন সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। তবে যদি আমাদের নিয়োগের বিষয়ে দেখার নির্দেশ দেয়া হয় তাহলে স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
আনন্দবাজার/এফআইবি