শাঁখা-সিঁদুর পরতে অস্বীকার করা মানে হিন্দু মতে পুরো বিয়েটাকেই অস্বীকার করা, এই যুক্তিতে বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি দিয়েছে গুয়াহাটি হাইকোর্ট।
ঝামেলাটা ছিল অসমের এক স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। ২০১২ সালে ডিগবয়ের ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে স্ত্রী শ্বশুরবাড়িতে আসেন। ছেলেটি তাঁর মা, বোন, ভাইয়ের সাথে একই বাড়িতে থাকতেন। মাসখানেক যেতে না যেতেই বউ দাবি করেন, তাঁকে আলাদা রাখতে হবে। তিনি শ্বশুরবাড়ির লোকের সাথে থাকতে পারছেন না। এই নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। বাধে প্রবল ঝগড়াও। পরে স্বামী তাঁকে নিয়ে আলাদা বাড়িতে রাখেন।
তারপরেও ঝগড়া শেষ হয়না। স্ত্রী শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতার অভিযোগ দায়ের করেন। এবিষয়ে স্বামীও পাল্টা অভিযোগ করেন। তারপর স্বামী ফ্যামিলি কোর্টে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য মামলা দায়ের করেন। সেই মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ায় স্বামী যান হাইকোর্টে। বিচারপতি অজয় লাম্বা ও বিচারপতি সৌমিত্র সইকিয়া বলেছেন, ”হিন্দু বিয়ের রীতি অনুসারে একজন নারী হিন্দু প্রথা ও অনুষ্ঠান মেনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তিনি যদি শাঁখা ও সিঁদুর পরতে অস্বীকার করেন, তাহলে তিনি নিজেকে অবাবিহত দাবি করেন। অথবা তিনি এই বিয়েটাই অস্বীকার করতে চান। এই মামলায় উত্তরদাতা(স্ত্রী) সাক্ষ্য দেওয়ার সময় তা মেনেও নিয়েছিলেন। ফ্যামিলি কোর্ট এই সাক্ষ্যটাকে সঠিক পরিপ্রেক্ষিতে দেখেনি।
শুধু তাই নয়, স্ত্রী যে শ্বশুরবাড়িতে না থেকে আলাদা বাড়ি ভাড়া করতে স্বামীকে বাধ্য করেছিলেন, সেটাও বিচারপতিদের ভাষায় নিষ্ঠুরতা। তাঁরা বলেন, ছেলেকে জোর করে তাঁর মায়ের থেকে দূরে নিয়ে বসবাস করানোটা নিষ্ঠুরতা। মেনটেনেন্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অফ পেরেন্টস অ্যান্ড সিনিয়ার সিটিজেনস অ্যাক্ট ২০০৭ অনুসারে সন্তানকে তাঁদের মা-বাবাকে দেখা বাধ্যতামূলক।’
মামলার রায়ে এটাও বলা হয়েছে, অপ্রমাণিত অভিযোগের বিরুদ্ধে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করাটাও এক প্রকার নিষ্ঠুরতার পর্যায়ে পড়ে। আর স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতার কোনও সম্ভাবনা নেই বলে বিয়ে টিকিয়ে রাখারও কোন মানে হয় না। তাই তাঁরা বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি দিয়েছেন।
তবে শাঁখা-সিঁদুর না পরা মানে হিন্দু মতে বিয়ে অস্বীকার করার রায় নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক মধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে পুরুষতান্ত্রিকতার। সোচ্চার হয়েছেন নারীবাদীরা।
আনন্দবাজার/তা.তা