তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে পুরান ঢাকার কসাইটুলিতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন জজ কোর্টে মুহুরির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা আব্দুর রহমান। করোনাভাইরাস সংকটে কাজ না থাকায় দুই মাস পূর্বে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম আব্দুল্লাহপুরে চলে গিয়েছিলেন এই পরিবার।
এবার ঢাকার ওই বাসার মালপত্র বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্ত্রী হাসিনা রহমান এবং আট বছরের ছেলে সিফাতকে নিয়ে সোমবার সকালে সদরঘাটমুখী লঞ্চে উঠেছিলেন আব্দুর রহমান। প্রায় দুই ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে ঠিকঠাকই গন্তব্যের কাছে এসেছিলেন তারা।
কিন্তু সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শ্যামবাজারের কাছে বুড়িগঙ্গা নদীতে চাঁদপুর রুটের লঞ্চ ময়ূর-২ এর ধাক্কায় ডুবে যায় তাদের লঞ্চ। লঞ্চের যাত্রীদের মধ্যে ৩০ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন ডুবুরিরা।
তাদের মধ্যে হাসিনা রহমান (৩৫) ও তার ছেলে সিফাতের লাশ আছে। কিন্তু আব্দুর রহমানের খোঁজ এখনও পাননি স্বজনরা।
নদী থেকে লাশ উদ্ধার করে নেওয়া হয় পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে। সেখানে এসেই বোন ও ভাগ্নের লাশ শনাক্ত করেন হাসিনার বোন হামিদা বেগম।
মর্গে রাখা লাশের সারির প্রথমে ভাগ্নে সিফাতকে দেখে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন হামিদা। কিছুক্ষণের মাঝে খুঁজে পান বোন হাসিনার মৃতদেহ।
হামিদা বেগম জানান, “দুলভাই অনেক কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছিলো। বড় ছেলে হাসিবুর রহমান এবার এইচএসসি পাশ করেছে, মেজ ছেলে রিফাত নবম শ্রেণিতে পড়ে।
“করোনার ফলে দুই মাস আগে পুরো পরিবার গ্রামে চলে যায়। সকালে দুলাভাই বোন ও ছোট ভাগ্নেকে নিয়ে কসাইটুলি আসছিলেন বাসার মালামাল নিয়ে যাওয়ার জন্য। তবে আসার পথেই ঘটে গেল এই দুর্ঘটনা।”
লাশের সারিতে বিউটি বেগম (৩৮) নামে এক গৃহবধূকে শনাক্ত করেন তার দেবর রনি খান।
তিনি জানান, তার ভাই লিটন খানের চোখে অস্ত্রোপচার করানোর জন্য ঢাকায় আসেন ভাই-ভাবী।
“ভাই বেঁচে রয়েছে। তবে দুর্ঘটনায় ভাবী মারা গেল।”
আনন্দবাজার/এফআইবি