টনসিলের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসার খোঁজে গিয়ে বিপদে পড়ে যায় এক গর্ভবতী নারী। কোনো কারণ ছাড়াই অহেতুক করোনারোগী সন্দেহ করে দুইটি হাসপাতাল টানা নয় ঘণ্টা ধরে গর্ভবতী ওই নারীকে ঘোরায়। কিন্তু চিকিৎসা দেওয়া তো দূরের থাক- তার পাশেও গেল না কোনো ডাক্তার, এমনকি কোন নার্সও। উপায় খুঁজে না পেয়ে অন্তত সিজার করে সাত মাসের বাচ্চাটা বের করে নেওয়ার জন্য আকুতি জানালেও সবাই তাড়িয়ে দিয়েছিল দূর দূর করে। শেষ পর্যন্ত লাগাতার ৯ ঘণ্টার লড়াই শেষে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন সেই গর্ভবতী নারী।
জানা যায়, কক্সবাজারের চকরিয়ার বেতুয়াবাজার এলাকার রাবেয়া (৩২) ছিলেন সাত মাসের গর্ভবতী। বেশ কিছুদিন আগে চকরিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কারণে তার ঘরে পানি উঠে যায়। ওই সময় পানি সরানোসহ ঘরের অন্যান্য কাজ করতে গিয়ে ঠান্ডা লাগে তার। এতে টনসিলের সমস্যায় ভুগতে থাকেন তিনি। ২৬ জুন সকালে হঠাতই অবস্থার অবনতি হলে তাকে চকরিয়ার জমজম হাসপাতালে নিয়ে যায় তার স্বজনরা।
সেদিন সকাল ৯ টা নাগাদ জমজম হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয় মেডিসিন ওয়ার্ডে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার প্রাথমিক চিকিৎসার গাইনি ওয়ার্ডে রেফার করেন। কিন্তু করোনারোগী সন্দেহে গাইনি ওয়ার্ডে থাকা ডা. নাসিমা ও ডা. ফয়েজ রোগীকে গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করাতে রাজি হননি। পরে সেখান থেকে রাবেয়াকে নেওয়া হয় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে। জমজম থেকে রাবেয়াকে গাইনি ওয়ার্ডে রেফার করা হলেও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে তাকে ভর্তি করে রাখা হয় করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে। এখানে এসে রাবেয়ার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। তাকে গাইনি ওয়ার্ডে স্থানান্তর করতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে পরিবারের সদস্যদের বলা হয়, এখানে তার চিকিৎসা হবে না, রোগীকে চট্টগ্রাম নিয়ে যান।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালেও চিকিৎসা না পেয়ে রাবেয়ার পরিবারের সদস্যরা ডুলাহাজারা মালুমঘাট খ্রিস্টান মিশনারি হাসপাতালে ভর্তির জন্য যোগাযোগ করেন। তারা রাবেয়াকে গাইনি চিকিৎসা দিতে রাজি হলেও সেই চিকিৎসা পাওয়ার আগেই কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে মালুমঘাট যাওয়ার পথে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ পেটে সাত মাসের অনাগত বাচ্চা নিয়ে রাবেয়ার মৃত্যু হয়।
রাবেয়ার ভাই ডা. মিজান জানান, বন্যার সময় ঘরে উঠা পানি সরাতে গিয়ে সে টনসিলের সমস্যা দেখা দেয়। একপর্যায়ে তার খাওয়াদাওয়া সব বন্ধ হয়ে যায় টনসিলের কারণে। এসব কারণে সে দুর্বল হয়ে পড়তে শুরু করে। সাথে শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। সিজার করে বাচ্চাটা বের করে নিতে পারলে হয়তো তাকে বাঁচানো সম্ভব হতো। একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ তাকে দেখে গাইনি ওয়ার্ডে রেফার করার পরেও সে গাইনি চিকিৎসা পায়নি। কেউ চেকআপ পর্যন্ত করতে আসেনি।
এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মহিউদ্দীন বলেন,এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এমনটা হওয়ার কথা না। রোগীর পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করলে আমি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবো।
আনন্দবাজার/তা.তা