সম্প্রতি চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় জালিয়াতির মাধ্যমে পূবালী ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার হয়েছে। মঙ্গলবার নগরীর আগ্রাবাদ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
জালিয়াতির দায়ে গ্রেপ্তাররা হলেন জালিয়াত চক্রের হোতা মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম (৩৪)। তিনি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হেমায়েতপুর গ্রামের ইয়াজ উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে। বসবাস ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানার নসরুদ্দিন রোডে।
অপরজন মো. মহিউদ্দিন মনির (৩০)। তিনি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের মৃত আহম্মদ হোসেনের ছেলে।
গ্রেপ্তারকারীদের কাছ থেকে বেশকিছু ডেবিড ও ক্রেডিট কার্ড, ক্লোনিং করার মেশিন, বুথের মেশিন খোলার চাবি এবং একটি দেশী এলজি ও একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়।
ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহির হোসেন জানান, শরীফুল ২০০৩ সালে এইচএসসি পাস করে রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটিতে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তিন বছর মেয়াদী ডিগ্রিতে পড়তে যায়। সেখানে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় তার রাশিয়ান রুমমেট ইভানোভিচের কাছ থেকে ক্রেডিট কার্ড প্রতারণার কৌশল শেখে। ২০১০ সালে দেশে আসার পরপরই সে কার্ড জালিয়াতি শুরু করে। এরপর ২০১৩ সালে পরপর দুইটি মামলায় ১৮ মাসের জেলও হয়। কিন্তু জামিনে বের হয়ে ফের জড়িয়ে পড়ে এসব কাজে।
তিনি জানান, সে প্রতিবার এ ধরণের জালিয়াতির আগে ভারতীয় ভিসা নিয়ে রাখত। জালিয়াতি করে টাকা উত্তোলনের জন্য সে ভারতে পালিয়ে যেত। কিছুদিন থাকার পর সেখান থেকে আবার দেশে ফিরত। গত ২০১৯ সালের নভেম্বরে বুথে জালিয়াতির পরও সে ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল।
বুধবার (২৪ জুন) এ বিষয়ে উপ-কমিশনার (পশ্চিম) ফারুকুল হক সাংবাদিকদের জানান, তারা ক্রেডিট কার্ড ক্লোনিং ও বুথে জালিয়াতি করে টাকা উত্তোলন চক্রের সক্রিয় সদস্য। এর আগেও শরীফুল একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছিল ঢাকা ও চট্টগ্রামে। গত বছর নভেম্বরে ডবলমুরিং থানায় করা জিডির তদন্ত করতে গিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের সাথে কেউ আছে কি না এসব বিষয় আমরা খতিয়ে দেখছি।
তিনি আরও জানান, শরীফুল যেসব ব্যাংকে এনসিআর ৬৬২২ ও সেল্ফ সার্ভ ২২ এটিএম বুথ ব্যবহার করে, সেগুলো টার্গেট করে অনলাইনের মাধ্যমে বুথগুলোর বিকল্প চাবি সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে ‘ম্যালওয়্যার’ সফটওয়্যারের মাধ্যমে পেনড্রাইভ এটিএম মেশিনে প্রবেশ করিয়ে প্যানেল নিয়ন্ত্রণ করে এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করেন।
গ্রেপ্তার শরীফুল পুলিশকে জানান, ইসলামী ব্যাংক, এবি ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা উত্তোলনের শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি। এরপর ১৫ নভেম্বর ‘এলাইস ম্যালওয়্যার’ সফটওয়্যার ব্যবহার করে নারায়ণগঞ্জের চাষড়ার পূবালী ব্যাংকের বুথ থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। ঠিক এরপরই ১৬ নভেম্বর কুমিল্লার কান্দির পাড় বুথ থেকে তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা, ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় পূবালী ব্যাংকের চট্টগ্রাম কলেজ শাখার এটিএম বুথ থেকে তিন লাখ ৩৪ হাজার টাকা ও আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোড শাখার বুথ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে তিন লাখ ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন শরীফুল।
ডবলমুরিং থানার ওসি সদীপ কুমার দাশ জানান, পূবালী ব্যাংকের চারটি বুথ থেকে টাকা উত্তোলনের ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা শরীফুলকে শনাক্ত করি এবং তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করি। তারা ভেবেছিল করোনা পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজর দিচ্ছে না। তাই নগরীতে আবার আসে তারা। গত ২২ জুন আবারও কোতোয়ালীর জিপিও এলাকায় বিকেল পৌনে ৪টায় সাউথইস্ট ব্যাংকের বুথ এবং ৫টায় আগ্রাবাদে মিডল্যান্ড ব্যাংকের বুথে ঢুকে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় শরীফুল ও তার সহযোগী মনির। এরপর মঙ্গলবার (২৩ জুন) তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আনন্দবাজার/শাহী