জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে যেনো কোনোভাবেই মুক্তি মিলছে না নারায়ণগঞ্জে ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) বাঁধের মধ্যে বসবাসকারী মানুষের। সামান্য বৃষ্টিতেই কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে থাকছে পুরো এলাকা। জলাবদ্ধতার ফলে প্রায় ২০ লক্ষাধিক লোকের আবাসস্থল ডিএনডি প্রজেক্ট এলাকা দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
ডিএনডির অভ্যন্তরের ৩২ দশমিক ৮ কিলোমিটার এলাকায় রাজধানী ঢাকার চারটি ইউনিয়ন দনিয়া, শ্যামপুর, সারুলিয়া, মাতুয়াইল এবং নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন কুতুবপুর, ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, গোদনাইল রয়েছে।গত বুধ ও বৃহস্পতিবারের টানা দুদিনের বৃষ্টিতেই প্রকল্প এলাকার ৮০ ভাগ মানুষের জনজীবন থেমে যায়।
ডিএনডি এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে ওঠায় এ সমস্যা আরও প্রকট আকার নিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও তার কাজ ধীরগতিতে চলছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বুধবার মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত একটানা ভারী বর্ষনের কারনে ডিএনডি এলাকার বিভিন্ন সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যায়। এছাড়া অলিগলিতে হাটু সমান পানি। কারও কারও ঘর-বাড়িতেও পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়া মহল্লার অলিগলিতে মানুষ পানি বেয়ে চলাচল করছে।
নাসিক ৭নং ওয়ার্ড ডিএনডি এলাকার বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন তৌহিদ বলেন, পানির কথা বলে লাভ কী? একটু বৃষ্টি হলেই কদমতলী, নয়াপাড়া সহ আশপাশের এলাকার মানুষের দুর্ভোগ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার মত না। এলাকার মানুষ পানির নিচে বসবাস করছে। রাতের টানা বৃষ্টিতে যেন বন্যা দেখা দিয়েছে। মানুষ পানি পেরিয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছে। আমরা যারা ডিএনডি এলাকার বাসিন্দা তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। এ এলাকা আমাদের বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে।
তিনি আরো জানান, মাত্র বর্ষাকাল শুরু এখনি একদিনের বৃষ্টিতে পানিবদ্ধ হয়ে পড়ছি আমরা। বর্ষাকালের বাকি সময়টা নিয়ে আমরা শংকিত। এত কোটি টাকা খরচ করে সরকার ডিএনডির জলবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে তার নমুনা এটা প্রশ্ন রাখেন তিনি।
এদিকে, জলাবদ্ধতার কারণে দিনমজুর রিক্সা, ভ্যান, অটোচালক ও বিভিন্ন গার্মেন্টস শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে। তাদের নিম্ন আয়ের কারণে তারা সাধারনত নিম্নাঞ্চলের বস্তির ঘরগুলিতে ভাড়া থাকতে হয়। জলাবদ্ধতার বৈরী আবহাওয়ার কারনে আজ কোন আয় নেই। ডুবে গেছে আবাসস্থল, ভেসে যাচ্ছে ঘরের মালামাল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিএনডি এলাকার দেলপাড়া, ভুঁইগড়, মাহমুদপুর, আদর্শনগর, রসুলপুর, নয়ামাটি, নুরবাগ, নন্দলালপুর, পিলকুনি, কুতুবআইল, ইসদাইর, গাবতলী, লালপুর, সস্তাপুর, কলেজ রোড, দেওভোগ, পাইকপাড়া, বাবুরাইল, হাজীগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানতলী, গোদনাইল, জালকুড়ি, মিজমিজি ও হিরাঝিল জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে।
এছাড়া ফতুল্লার মাসদাইর, মুসলিমনগর, হরিহরপাড়া, ধর্মগঞ্জ, কাশিপুরসহ প্রায় শতাধিক এলাকা পানির নিচে রয়েছে।
ডিএনডি পাম্প হাউস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতে বাঁধের ভেতরে যে পরিমাণ জমে সেই পানি নিষ্কাশন করতে সময় লাগে ১০ দিন। তাই বৃষ্টিপাত না হলে আগামী ৫ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে পানি নিষ্কাশন করতে। করোনার কারণে জনবল সংকটে পানি নিষ্কাশন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। তবে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য ডিএনডি প্রকল্পের স্থাপিত ২৯৮ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি পাম্প চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সেনাবাহিনী।
ডিএনডির জলাবদ্ধতার প্রসঙ্গে শিমরাইল ডিএনডি পাম্প হাউসের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাম প্রসাদ বাছার বলেন, চারটি পানি নিষ্কাশনের পাম্পের মধ্যে তিনটি চালু আছে। একটি পাম্প বিকল আছে। ছোট ছোট আরও কিছু পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে অক্টোবরে ডিএনডির জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য পাম্প হাউস স্থাপন, খাল খনন, কালভার্টসহ বিভিন্ন কাজের জন্য ৫৫৮ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু করে সেনাবাহিনী। চলতি বছরে প্রকল্পের কাজ সম্পন্নের জন্য আরও ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। বর্তমানে সেটি পরিকল্পনা কমিশনে একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
আনন্দবাজার/শাহী