বাঁশখালীতে করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে দেওয়া লকডাউনে মিটার রিডিং না দেখেই বিদ্যুৎ বিল করার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ বাঁশখালী জোনাল অফিস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। মিটার না দেখেই এক গ্রাহককে ১৭ হাজার ৮৩৪ টাকার বিল ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। বিল নিয়ে অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনার কারণে ঘরে ঘরে গিয়ে রিডিং নেয়া সম্ভব হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিল নিয়ে চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ বাঁশখালী জোনাল অফিসে প্রতিদিন হাজির হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারিভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিধিনিষেধ থাকলেও সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই বাঁশখালী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে।
রবিবার সরেজমিন দেখা গেছে, বিল প্রস্তুত কক্ষ, অভিযোগ কক্ষ ও ডিজিএমের কক্ষের সামনে গিয়ে অনেকেই অতিরিক্ত বিলের বিষয়ে অভিযোগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এ সময় অফিসে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা গ্রাহকদের সদুত্তর দিতে পারছিলেন না। কর্মকর্তাদের কেউ কেউ বিরক্তবোধও করছিলেন। ভিড়ের কারণে কিছু ব্যক্তিকে বিল না দিয়ে চলে যেতেও দেখা যায়।
পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকদের অভিযোগ, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এমনিতেই সাধারণ মানুষ ঘরবন্দী ও কর্মহীন হয়ে পড়েছে। উপার্জন না থাকায় খেয়ে না খেয়ে কোনরকম দিনাতিপাত করছেন। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন মিটারের কাছে না গিয়ে মনগড়া বিল তৈরি করে বাড়িতে পাঠিয়েছে। বিদ্যুৎ বিলের কাগজের সাথে মিটারে ব্যবহৃত রিডিংয়ের মিল নেই। এমনকি এক মাসের বিল দুইবারও দেখানো হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও গত তিন মাসের বিল জরিমানাসহ একসাথে নেওয়ার অভিযোগও করেছেন গ্রাহকরা।
কালীপুর ইউনিয়নের পালেগ্রামের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ বলেন, বাঁশখালী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন অফিসে বসে মনগড়া বিদ্যুৎ বিল তৈরি করছে। মার্চ, এপ্রিল ও মে তিনমাসে আমার বিল এসেছে ৫ হাজার ১৪০ টাকা। করোনার আগে বিল আসতো প্রতিমাসে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে। সেই হিসেবে বিল আসার কথা ছিল মোট তিন মাসে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। কিন্তু অতিরিক্ত বিল হিসেবে আসছে ৩৫০০ টাকারও বেশি।
তিনি বলেন, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় করোনাকাল মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসের বিল এসেছে দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। আমি এ বিষয়টি নিয়ে অফিসে দায়িত্বরত লোকজনের সাথে যোগাযোগ করলে বলে এবারের বকেয়া বিলগুলো দিয়ে যান। আগামী মাস থেকে ঠিক হয়ে যাবে। এভাবে বলে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস প্রতি মাসেই বাড়তি বিদ্যুৎ বিল নিচ্ছে।
অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাঁশখালীর উত্তর জলদি ১ নং ওয়ার্ডের মমতাজ বেগমও; তিনি বলেন, তিন-চার মাস ধরে স্বামীর আয়-রোজগার নেই। আমি নতুন মিটার স্থাপন করেছি। মিটার লাগানোর পর থেকে করোনার কারণে বিল প্রদান স্থগিত ছিল। এখন প্রথম বিলে এসে গেছে ১৭ হাজার ৮৩৪ টাকা। মিটার না দেখে অনুমানের উপর বিল করে দিল।
এ বিষয়ে বাঁশখালী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম মুফিজুল ইসলাম দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, করোনার কারণে কয়েক মাস বিল আদায় বন্ধ ছিল। করোনা সংক্রমণের কারণে ঘরে ঘরে গিয়ে রিডিং নেয়া সম্ভব হয়নি, তাই কিছুটা সমস্যা হতে পারে। ভুল পরিলক্ষিত হলে অফিসে অভিযোগ করলে তদন্তপূর্বক সংশোধন করে নেওয়া হচ্ছে। আগামী মাস থেকে গ্রাহকদের সকল সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।
আনন্দবাজার/এফআইবি