করোনাভাইরাসের কষাঘাতে কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ায় বাসা ছেড়ে দিচ্ছে অনেকেই। অনেকের আবার কর্মসংস্থান থাকলেও আয় কমে যাওয়ায় হারিয়েছেন বাসার ভাড়া বয়ে যাওয়ার সামর্থ্য। যে কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাতেই দেখা গেছে বাসা ভাড়া দেয়ার বিজ্ঞাপন।
দেশের কর্মসংস্থানের বিশাল অংশ ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন কাজের সন্ধানে এখানে ছুটে আসেন। কর্মসংস্থান বা ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় প্রতিদিনই এ শহরে পাড়ি জমায় মানুষ। আর এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই ভাড়া বাসার বাসিন্দা। করোনার কারণে ভাড়ার ভার বহন করতে না পেরে অনেকেই বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন গ্রামে। কেউ বা খুঁজে নিচ্ছেন স্বল্প মূল্যের বাসা।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখে গেছে, অধিকাংশ বাড়িতেই ফাঁকা রয়েছে দু-একটা ফ্ল্যাট। ভাড়াটিয়া চেয়ে ‘টু লেট’ লেখা বিজ্ঞাপন দিয়েও ভাড়াটিয়া খুঁজে পাচ্ছেন না মালিকরা। দু-একটি ফ্ল্যাট ফাঁকা হয়ে যাওয়ার মধ্যেই বাড়ির মালিককে বাসা ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিচ্ছেন আরও অনেক ভাড়াটিয়া।
‘টু লেট’ বিজ্ঞাপনের কারণ জানতে গেলে বেশ কিছু বাড়ির মালিক জানান, সাধারণ ছুটির কারণে অনেকেই তাদের পরিবারের সদস্যদের পাঠিয়ে দিয়েছেন গ্রামের বাড়িতে। পরিবারের উপার্জনের ব্যক্তিটি পরে বাসা ছেড়ে দিয়ে অন্য কোনো মেস বা ছোট বাসায় উঠেছেন, যে কারণে অনেক বাসা ফাঁকা হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন কেউ বাসা পরিবর্তন করছেন না। যে কারণে বাসাগুলো ফাঁকা রয়ে যাচ্ছে।
রাজধানীর বাড্ডা এলাকার একটি বাড়ির মালিক জয়নাল হক বলেন, আমার পাঁচতলা বাড়ির দুটি ফ্ল্যাট গত দুই মাস ধরে ফাঁকা। আগে ‘টু লেট’ সাঁটানোর সাতদিনের মধ্যে বাসা ভাড়া হয়ে যেত। কিন্তু এখন ভাড়াটিয়া পাওয়া যাচ্ছে না।
রাজধানীর মালিবাগ এলাকার মকলেসুর রহমান কিছুদিনের মধ্যেই বাসা ছাড়বেন। তিনি জানান, সীমিত বেতনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। যেখানে বেতনের সিংহভাগই চলে যায় বাসা ভাড়ায়। স্ত্রী আর এক সন্তান নিয়ে ওই বাসায় থাকতাম। কিন্তু বিগত দুই মাস ধরে অর্ধেক বেতন পাচ্ছি। যে কারণে বাসা ছেড়ে দিয়ে স্ত্রী-সন্তানকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে আমি একটি মেসে উঠবো।
এ বিষয়ে ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহরানে সুলতান বাহার বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, অনেকেরই আয় কমেছে। এই অবস্থায় বাসা ভাড়া পরিশোধ করা অনেকেরই জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক বাড়ির মালিক ভাড়াটিয়াদের প্রতি সহানুভূতি না দেখিয়ে ভাড়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। যে কারণে অনেকেই বাসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
আনন্দবাজার/ডব্লিউ এস