ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএসআরএম’র বিরুদ্ধে ৩ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জে অবস্থিত রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলসের (বিএসআরএম) কারখানায় কাজ করার সময় লোহার গলিত সিসায় দগ্ধ হয়ে ৩ শ্রমিকের মৃত্যু হওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলা জনিত অপরাধে মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে কারখানার ফ্লোর ইনচার্জকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়।

রবিবার (৭ জুন) দুপুরে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া আবুল কাশেমের শ্যালক আবদুর রহিম বাদী হয়ে জোরারগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া।

তিনি জানান, নিহত শ্রমিক কাশেমের শ্যালক আজকে দুপুরে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। সেখানে কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলা জনিত অপরাধে মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে কারখানার ফ্লোর ইনচার্জকে আসামি করা হয়েছে। আমরা মামলা হিসেবে তা এন্ট্রি করেছি। এখন তদন্তে উঠে আসবে দুর্ঘটনার কারণ কি?

জানা যায়, শনিবার (৬ জুন) বিকেলে বিএসআরএমের কারখায় গঠিত দুর্ঘটনায় ৫ জন শ্রমিক গুরুতরভাবে দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে কাশেম নামে এক শ্রমিক৷ শনিবার রাতে দগ্ধ ৪ শ্রমিককে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে আইসিইউ সুবিধা সম্বলিত অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রওনা দেয় বিএসআরএম কর্তৃপক্ষ।

এরমধ্যে রোববার (৭ জুন) ভোর রাতে ঢাকা নেওয়ার পথে কুমিল্লা পদুয়া বাজার বিশ্বরোড পার হলেই দগ্ধ দুই শ্রমিক মারা যান গিয়াস উদ্দিন (২৪) ও নজরুল ইসলাম (২৪) এর আগে শনিবার এ ঘটনায় আবুল কাশেম (২৭) নামে এক শ্রমিক মারা যান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হয় নুর হোসেন (৩০), মহিউদ্দিন (২৮) নামের অপর দুই শ্রমিককে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএসআরএমের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক ওমর সোহাইব বলেন, ‘দুর্ঘটনার শিকার ৫ শ্রমিককে আমরা চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে ১ শ্রমিক মারা যান। রোববার ঢাকা নেওয়ার পথে কুমিল্লা পার হলে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যান অপর দুইজন। যে দুইজন জীবিত আছেন তাদের ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসা চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অপ্র্যাশিত এই পরিস্থিতি ও দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএসআরএম কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে এবং হতাহতদের প্রয়োজনীয় সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কোন কলকারখানায় দুর্ঘটনা হলেই নিয়ম অনুযায়ী দ্রুত পরিদর্শন করে সরকারি প্রতিষ্ঠান কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর। কিন্তু বিএসআরএম কারখানায় দুর্ঘটনায় ৩ জন শ্রমিক মারা যাওয়ার ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।’

বিএসআরএমের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) তপন দাশ গুপ্তা বলেন, ‘চমেক হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে দগ্ধ ৪ জনকে রাতেই অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। ভোরে দুজন পথেই মারা যান। অন্য দুজনকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে আইসিইউ সাপোর্ট। তাদের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয় কোম্পানি বহন করবে। এছাড়া নিহত শ্রমিক শ্রমিকদের পরিবারকে নিয়ম মেনে সহায়তা করা হবে।’

এ প্রসঙ্গে জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘বিএসআরএম কারখানায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে চুল্লি থেকে তরল তপ্ত লোহা উপচে পড়ে নিচে কর্মরত শ্রমিকদের ওপর। গুরুতর আহত অবস্থায় ৫ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আপাতত কারখানায় কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা কারখানা পরিদর্শনে এসেছি।’

আনন্দবাজার/শাহী

সংবাদটি শেয়ার করুন