রবিবার (৩১ মে) থেকে সারাদেশে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে গণপরিবহন চালুর অনুমতি দেয়া হয়। এর আগে করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ ২ মাস গণপরিবহন বন্ধ ছিলো। গণপরিবহন চালু করার পর পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠন গুলোর চাপে গণপরিবহনে ৬০% বার্তি ভাড়া ধার্য্য করা হয়। কারণ হিসাবে ২ মাস গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আর্থিক ক্ষতিকে উল্লেখ করা হয়।
এই ঘোষণার পরপরই সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পরে। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন থেকে এ ঘোষণাকে অযৌক্তিক ও অনৈতিক দাবি করা হয়।
২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এর সমন্বিত সংগঠন নিসআ থেকে এই ৬০% ভাড়া বৃদ্ধিকে সাধারণ মানুষের উপর আর্থিক নির্যাতন হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর স্বাস্থ্যবিধি নির্দেশনা বাস্তবায়ন সহ তাদের পক্ষ থেকে আরো ৩ দফা স্থ্যবিধি প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার (১ জুন) সংগঠন টির থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি তে জানানো হয়, ‘লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে বিআরটিএ এর থেকে গণপরিবহন গুলোতে ৬০% বার্তি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে যা সাধারণ মানুষের উপর আর্থিক নির্যাতনের শামিল। ‘
কারণ হিসাবে তারা উল্লেখ করে লকডাউনে শুধু পরিবহন খাত নয়, বরং সারাদেশের মানুষ ই কর্মহীন হয়ে পরায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার বিশ্বব্যপী জ্বালানি তেলের দাম অনেক কমানো হলেও, দেশে গত ১০ বছরের অধিক সময় থেকেই বিশ্ববাজারের চেয়ে এর দাম অনেক বেশি। এ অবস্থায় তেলের দাম কমিয়ে পরিবহন খাতে ক্ষতিপূরণ সম্ভব। আবার শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের নামে প্রতিবছর সারা দেশে ঘোষিত ২ হাজার কোটি টাকা ফান্ড উঠানো হয়। অঘোষিত হিসাব করলে ৩০-৪০ হাজার কোটি টাকা বা তার ও বেশি। অথচ এ কল্যাণ তহবিল এর টাকা থেকে শ্রমিক দের কল্যাণে খরচ করার নজির কখনোই দেখা যায়নি। এমনকি বর্তমান করোনা দূর্যোগেও অভাবগ্রস্থ শ্রমিকদের এ ফান্ড থেকে সহয়তা করা হয়নি, যার কারণে অনেক পরিবহন শ্রমিকই বিক্ষোভে নামে।
এ অবস্থায় এই পরিবহন শ্রমিক কল্যাণ তহবিল ব্যবহার করেও পরিবহন শ্রমিকদের ক্ষতিপূরন করা যায়। অথচ এসব পদক্ষেপ গুলো গ্রহণ না করে ৬০% বার্তি ভাড়া ধার্য্য করা হলো। এমনকি স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে গণপরিবহন চালুর অনুমতি দেয়া হলেও কোনো স্বাস্থ্যবিধি ই মানা হচ্ছে না, যা মানুষের মৃত্যুঝুকি বাড়াচ্ছে।
এ প্রেক্ষিতে সংগঠনটির যুগ্ম আহবায়ক শাহীদুল ইসলাম আপন জানান, “এ অবস্থায় আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়ন না হলে দেশের মানুষের মৃত্যু ঝুকি অনেক বাড়বে। এ নির্দেশনা সহ আমাদের প্রস্তাবিত ৩ টি বিধি রয়েছে তা হলোঃ-
১. সকল গণপরিবহন শ্রমিককে স্বাস্থ্য বিধি মোতাবেক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং এই সময়ে সমস্ত পরিবহন জীবাণুমুক্ত রাখা নিশ্চিত করা।
২. বিআরটিসি এর প্লাস্টিক/ফাইবার সিটের বাসগুলোকে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ শহর অন্যান্য এলাকায় ব্যবহার করা। কারণ এসব বাস জীবাণুমুক্ত করা তূলনামূলক সহজ।
৩. যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের জন্য সুষ্পষ্ট নির্দেশনা জারি করা। যেমন: হার্ড ইমিউনিটি স্তরে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের নিজের দায়িত্ব নিজেকে নিতে হবে। তাই গ্লাভস, উপযুক্ত মাস্ক ও সম্ভব হলে ফেস শিল্ড ব্যাবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে বাড়িতে প্রস্তুতকৃত ফেসশিল্ড ব্যবহার করা যায়। বিশেষ করে, ডাক্তার সহ সেবাদানকারী অন্যান্য পেশার কর্তব্যরতদের মত #শ্রমিকদের জন্য নির্দিষ্ট কয়েকদিন কাজ করার পর কোয়ারেন্টাইন অবলম্বন বাধ্যতামূলক করতে হবে।”
সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (নিসআ) থেকে বলা হয়, গণপরিবহনে এ অতিরিক্ত ভাড়া প্রত্যাহার ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের প্রস্তাবনা না মানলে তারা প্রতিবাদ কর্মসূচি পরিচালনায় নামবে।
আনন্দবাজার/মেহেদী