ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চন্দ্রঘোনা কেপিএম কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, স্থাপত্যকলার নান্দনিক নির্দেশন

রাঙামাটি পার্বত্য জেলার অন্তর্গত কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনায় দেশের সবচেয়ে বড় স্তম্ভবিহীন মসজিদটি অবস্থিত। এ মসজিদে চার দেয়াল ছাড়া মাঝখানে আর কোনো স্তম্ভ নেই।

মসজিদের ভেতরে ২৩টি সারি কাতার রয়েছে। প্রতিটি কাতারে শতাধিক মুসল্লি অনায়াসে দাঁড়াতে পারেন। এই মসজিদের অন্যতম আকর্ষণ হলো- মুসল্লিরা যে যেখানেই নামাজের জন্য দাঁড়ান না কেন তাদের প্রত্যেকেই খতিব কিংবা ইমাম সাহেবকে বাঁধাহীনভাবে দেখতে পারেন। ইমামের বয়ান ও ওয়াজ শুনতে পারেন।

অনেক বড় বড় মসজিদে মাঝখানের স্তম্ভের জন্য মুসল্লিদের কেউ কেউ ইমাম সাহেবকে সরাসরি দেখতে পারেন না। চন্দ্রঘোনায় অবস্থিত এই মসজিদে সে সমস্যা নেই। ইমাম সাহেবও উপস্থিত মুসল্লিদের মাঝে যাকে ইচ্ছা তাকে দেখতে অনায়াসে সরাসরি দেখতে পারেন।

বিশাল এই মসজিদের ছাদে রয়েছে ৮৪টি সিলিং ফ্যান। টিউবলাইট রয়েছে ৩৮টি। ছোট দৃষ্টিনন্দন ঝাড় বাতি রয়েছে ৩৮টি। এতগুলো ফ্যান ও বাতি বুকে নিয়ে মসজিদের ছাদ কিভাবে বছরের পর বছর ঠায় দাঁড়িয়ে আছে সেটা এক অবাক করা ব্যাপার। মোজাইক করা মসজিদের মেঝেতে বসলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। শীতাতপ ব্যবস্থা না থাকলেও মসজিদের সামনে ১৬টি এবং দুই পাশে ১৮টি জানালা রয়েছে। জানালাগুলো সব সময় খোলা থাকে। জানালা দিয়ে খোলা ফুরফুরে বাতাস সবসময় মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করে। আর ওপরে সিলিং ফ্যানতো অবিরাম ঘুরছেই। মসজিদে প্রবেশ করার জন্য তিনটি ফটক রয়েছে।

কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনায় অবস্থিত কর্ণফুলী পেপার মিল ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এই মসজিদের দেখভাল করেন। কেপিএম কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ হিসেবে এই মসজিদটি পরিচিত।

জানা যায়, দাউদ গ্রুব অব ইন্ডাষ্ট্রিজের চেয়ারম্যান আহমেদ দাউদ এইচ কে সাহেবের আম্মা হানিফা বাঈ ১৯৬৭ সালের ৮ ডিসেম্বর (৫ রমজান ১৩৮৭ হিজরি) কেপিএম আবাসিক এলাকায় এই মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেই সময় কর্ণফুলী পেপার মিল দাউদ গ্রুপের অধীনস্থ ছিল।

কর্ণফুলী পেপার মিলস এলাকায় বসবাসরত বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যাক্তি মোঃ আব্দুর রহিম জানান, এই মসজিদ টি যুগযুগ ধরে অনেক ঐতিহ্য, ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে। পাকিস্তান আমলে নির্মিত এই মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন দেশ- বিদেশের অনেক নামীদামী ব্যাক্তিরা। তিনি আশা করেন, এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি হাজার হাজার বছর ধরে তার ঐতিহ্যকে লালন করে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে।

এদিকে, কর্ণফুলী পেপার মিলস এ কর্মরত মোঃ আনিসুর রহমান জানান, কেপিএম এলাকায় অবস্থিত স্তম্ভবিহীন এই মসজিদটি শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো এশিয়ার মধ্যে বিখ্যাত একটি মসজিদ। বিশেষ করে কর্ণফুলী পেপার মিলস প্রতিষ্ঠিত হওয়া পর থেকে এই পর্যন্ত অনেক ইতিহাস, ঐতিহ্যের স্বাক্ষী এই মসজিদ। তিনি আশা করেন, মসজিদটি অনেক পুরোনো হওয়ায় পুনঃসংস্কার করানোর জন্য মিল কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

স্থাপত্যকলার অনন্য দৃষ্টান্ত এই মসজিদ যেনো তার ঐতিহ্য না হারায়, বিনষ্ট না হয় এখানকার বসবাসরত জনগনের এই দাবি।

আনন্দবাজার/শাহী

সংবাদটি শেয়ার করুন