ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি, পরিবার পরিজনের সাথে একত্র হওয়া, সেমাই পোলাও সহ নানা উপাদেয় খাবার খাওয়া, আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে গিয়ে কুশল বিনিময় করা। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে সেই খুশির দিন – ঈদ উল ফিতর। তাইতো ঈদ আসলে বেজে উঠে বিশ্ব কবির সেই কালজয়ী গান: ও মন রমজানেরই রোজা শেষে, এলো খুশির ঈদ।
মুসলিম সম্প্রদায়ের বৃহত্তম এই ধর্মীয় উৎসব রুপ নেয় পারিবারিক মিলন মেলায়। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তারা অপেক্ষা করে কখন ঈদের ছুটি হবে, পরিবার পরিজন, প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজনদের সাথে মিলিত হবে। আবার অনেকের নিজ বাড়ী হতে কর্মস্থল শত শত মাইল দূরে হওয়ায় তাঁরা উদগ্রীব থাকে পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার।
কিন্ত এবারের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্নতর। করোনা নামক একটি মরনব্যধি ভাইরাসের কারনে থেমে গেছে পুরো বিশ্ব। বহু লোকের প্রান কেড়ে নিয়েছে এই ভাইরাস আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি থেকে। সংক্রমণ ছড়িয়েছে ২০ হাজারেরও অধিক। তাই গত ২৬ মার্চ হতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে পুরো দেশ। দফায় দফায় অফিস আদালত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সরকারি প্রজ্ঞাপনে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিজ কর্মস্হলে অবস্হান করতে বলা হয়েছে, ফলে এবার ঈদের আনন্দ ” হরিষে বিষাদ” রুপ ধারণ করেছে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য।
কাপ্তাই উপজেলার প্রশাসনের কর্নধার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল এর কাছে এবার ঈদ উদযাপন প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এই বছর রোজা কখন যে শেষ হয়ে গেলো টের পাই নাই। তিনি জানান করোনা ভাইরাস সংক্রমনরোধে প্রতিদিন সকাল হতে রাত অবধি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে গেছি। এছাড়া কর্মহীন লোকদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছি জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক এই বার আমি পরিবার নিয়ে কাপ্তাইয়ে সরকারি বাসভবনে ঈদ উদযাপন করবো।
কাপ্তাই সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুনায়েত কাউছার, কাপ্তাই থানার ওসি নাসির উদ্দীন, চন্দ্রঘোনা থানার ওসি আশরাফ উদ্দীন জানান, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ফলে জনগনকে সচেতন করা, বহিরাগত কাউকে কাপ্তাইয়ে প্রবেশ করতে না দেওয়া সহ সার্বিক আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ২৪ ঘন্টা কাজ করে থাকে। আমরা এই বার স্ব- স্ব স্টেশনে থেকে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করবো, পাশাপাশি সরকারি নির্দেশনা পালন করবো।
কাপ্তাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সামসুল আলম চৌধুরী জানান, এবার তিনি পরিবার নিয়ে কাপ্তাইয়ে ঈদ উদযাপন করবেন, কারন করোনা ভাইরাসের ফলে সরকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উপর জোর দিয়েছে, তাই কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের নিয়ে আমরা প্রতিদিন মাঠে কৃষকের কাছে যাচ্ছি, তাদের পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে কোন জমি অনাবাদী না থাকে।
কাপ্তাই উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন জানান, তাঁরা প্রত্যেকই এক একটি ইউনিয়নে ট্যাগ অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার সামগ্রী হত দরিদ্রদের মাঝে বন্টনে উপজেলা প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করে যাতে সুষ্ঠভাবে বন্টন হয় সেই মোতাবেক সরকারি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাই এই বারের ঈদ তারা কাপ্তাইয়ে পালন করবেন।
সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রচার মাধ্যম তথ্য মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের কাপ্তাই উপজেলা তথ্য কর্মকর্তা মো: হারুন জানান, করোনা ভাইরাস সংক্রমনরোধে সরকারি প্রচার প্রচারনা কার্যক্রমে আমাদের দপ্তরের সকল কর্মচারী কাজ করে যাচ্ছেন, তাই সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আমরা এই বার কাপ্তাইয়ে ঈদ উদযাপন করবো, পাশাপাশি সরকারি কার্যক্রম চালিয়ে যাবো।
এই ভাবে কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, তাঁরা এইবারের ঈদটা স্ব- স্ব কর্মস্হলে উদযাপন করবেন।
আনন্দবাজার/শাহী