প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছিলাম রক্ত এক ধরনের তরল যোজক কলা। তখন বুঝতাম না এটি আবার কোন প্রকার কলা! কিন্তু এখন বুঝি এই কলার গুরুত্ব কতটুকু! মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এই রক্ত। শরীরের অন্য কোনো অঙ্গ নষ্ট হলেও মানুষ কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু রক্তের অভাবে বা রক্তে কোনো সমস্যা হলে মানুষ সরাসরি কুপকাত। বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় জরুরি মূহুর্তে অনেকেরই রক্তের প্রয়োজন হয়। লক্ষ লক্ষ টাকা থাকলেও নির্দিষ্ট গ্রুপের রক্ত না পাওয়ার ফলে মারা যান অনেক মানুষ। জরুরি মূহুর্তে এমন মানুষের পাশে মানবতার হাত বাড়িয়ে রক্ত সংগ্রহ ও রক্তদানের মতো মহৎ কাজ করে যাচ্ছে বেশকিছু সংগঠন। যারা করোনাময় পরিস্থিতি এবং পবিত্র মাহে রমজানেও কাজ করে যাচ্ছে মানুষের সেবায়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ আশিকুর রহমান।
জরুরি মূহুর্তে রক্ত সরবরাহ করেন এমন বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংগঠন হলোঃ
১. ডা. এড্রিক বেকার ব্লাড ফাউন্ডেশন
২. মেডিসিন ক্লাব
৩. সেচ্ছায় রক্তদান ব্লাড ফাউন্ডেশন
৪. সারস- সাভার রক্তদানকারী স্বেচ্ছাসেবী
প্রথমে এ বিষয়ে কথা হয় ডা. এড্রিক বেকার ব্লাড ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অরুপ সরকারের সাথে। তিনি বলেন ‘গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থী দ্বারা পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ডা. এড্রিক বেকার ব্লাড ফাউন্ডেশন। সংগঠনটি ২০১৭ সালে ৭ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে সিজার, থ্যালাসেমিয়া, ডায়ালাইসিস, ক্যান্সার, জরুরী অপারেশনে রক্তের দরকার হচ্ছে।
এ সকল রোগীদের দ্রুত সময়ে রক্ত সরবরাহে ডা. এড্রিক বেকার ব্লাড ফাউন্ডেশন এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র যৌথভাবে গত ১৮ এপ্রিল একটি কল সেন্টার চালু করেছে। “করোনা পরিস্থিতিতে জরুরি রক্ত সরবরাহ সেবা” কল সেন্টারের প্রধান উদ্যোক্তা অরুপ সরকার জানান প্রতিদিন আমাদের কাছে রক্তের জন্য অসংখ্য কল আসে। করোনা পরিস্থিতিতে যে সকল রক্তদাতা রক্তদানে এগিয়ে আসছে তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমাদের ট্রান্সপোর্টের জন্য কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। যদি কেউ ব্যাক্তিগত গাড়ি দিয়ে রক্তদাতাদের যাতায়তে সহযোগিতায় এগিয়ে আসত তাহলে আমরা আরো অধিক রোগীর জন্য রক্ত সরবরাহ করতে পারতাম।’
কথা হয় মেডিসিন ক্লাবের উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি ডা. জয়দেব বসাকের সাথে। তিনি জানায় ‘ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভালো কাজের মাধ্যমে চাইলেই যে কোন কঠিন দুর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব। এই প্রত্যয় নিয়ে ৩৯ বছর আগে শুরু হওয়া মেডিসিন ক্লাবের পথচলা আজও অব্যাহত আছে এই বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে।
মেডিসিন ক্লাব একটি মেডিকেল এবং ডেন্টাল শিক্ষার্থী দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা ও সমাজসেবামূলক সংগঠন,।সারাদেশে মেডিসিন ক্লাবের ২৫ টি মেডিকেল কলেজে পূর্ণাঙ্গ ইউনিট এবং ৭ টি মেডিকেল কলেজে আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে।
ইতোমধ্যে মেডিসিন ক্লাব চালু করেছে তাদের টেলিমেডিসিন সেবা- “হ্যালো মেডিসিন ক্লাব”। বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারনে মানুষ এখন ঘর থেকে বের হতে পারছে না তাই জনগণের স্বাস্থ্যসেবার কথা চিন্তা করে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান মেডিসিন ক্লাব,কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি আরমান হোসেন। এছাড়াও অধিকতর জটিল চিকিৎসা সংক্রান্ত সমাধানের জন্য রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ। অসংখ্য রোগী উক্ত টেলিমেডিসিন এর মাধ্যমে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ গ্রহণ করেছেন।
পাশাপাশি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সেবাদানকারী কর্মীদের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে মেডিসিন ক্লাবের বিশেষ পরিবহন সেবার কার্যক্রম ও ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।যার মাধ্যমে প্রতিদিন অসংখ্য চিকিৎসক তাদের যাতায়াতের সেবা গ্রহণ করছেন।এতো কিছুর মাঝেও থেমে নেই তাদের নিয়মিত কাজ হাসপাতালে রক্তসরবরাহ, প্রতিদিন তাদের বিভিন্ন ইউনিট রোগীদের জরুরী প্রয়োজনে রক্তসরবরাহ করে যাচ্ছে সংগঠনটি।
উক্ত বিষয়ে আরও কথা হয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ব্লাড ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সাইদ চৌধুরীর সাথে। তিনি বলেন ‘স্বেচ্ছায় রক্তদান ব্লাড ফাউন্ডেশন, একটি স্বেচ্ছাসেবী এবং অরাজনৈতিক সংগঠন। আমাদের মূল কাজ রক্তদাতা ম্যানেজ করে রোগির কাছে পৌঁছে দেওয়া। প্রায় সময়ই আমাদের কাছে যারা সহযোগিতা চায়, আমাদের স্বামর্থ অনুযায়ী তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করি। এই করোনা পরিস্থিতিতে রোগীদের রক্তের যোগান দিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি।
“আত্মার বন্ধনে বাঁধা এক একটি প্রাণ মুমূর্ষ রোগীর প্রয়োজনে স্বেচ্ছায় করি রক্তদান।”এই স্লোগানকে সামনে রেখে সবাই এগিয়ে আসুন স্বেচ্ছায় রক্তদানে।
কথা হয় সাভার রক্তদানকারী সংগঠনের সভাপতি মোঃ শাহাদাৎ হোসেনের সাথে। তিনি জানান ” ভালোবাসার রঙিন টানে বাঁচবে জীবন রক্তদানে “এই স্লোগানকে সামনে রেখে এই পরিস্থিতিতেও ডোনার ম্যানেজ করে দিচ্ছে এবং অন্যদের রক্তদানে উৎসাহিত করছে আমাদের সংগঠন। এখন দেশে হানা দিয়েছে করোনা ভাইরাস এবং তা খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে। এই সময়ে সবারই উচিৎ ঘরে থাকা। কিন্তু অনেক রোগী আছে যারা হসপিটালে আছে। তাদের রক্তের প্রয়োজন হয়।
অনেক সিরিয়াস রোগী থাকে যারা রক্তের অভাবে মারা যেতে পারে। তাদের কে রক্তদান করাও আমাদের সামাজিক ও মানবিক দায়িত্ব। রোজা রেখে রক্তদান করলে রোজা ভঙ্গ হয় না। এই অবস্থায় রক্তদান করলে ৭০ গুন সওয়াব পাওয়া যাবে। যারা রোজা রেখে রক্তদান করতে চায় না তারা ইফতারের পর চাইলেই দিতে পারে। তাই সকলের উচিৎ এই পরিস্থিতিতেও অসহায় রোগীদের পাশে দাঁড়ানো। আমরা সারস- সাভার রক্তদানকারী স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি।
আনন্দবাজার/শাহী