ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হালদায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ: উৎসবের আমেজে চলছে ডিম সংগ্রহ

দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে মা মাছ। প্রতি বছরের মত এবারও হালদা নদীতে উৎসবের আমেজে ডিম সংগ্রহ করছেন স্থানীয় জেলেরা।

আজ শুক্রবার (২২ মে) সকাল থেকে মা মাছ হালদা নদীতে ডিম ছাড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন।

জানা যায়, চট্টগ্রামের রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার প্রায় ৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকাজুড়ে হালদা নদীর অবস্থান। দুই উপজেলায় হালদা নদীর সত্তার ঘাট, অংকুরী ঘোনা, মদুনাঘাট, গড়দুয়ারা, কান্তার আলী চৌধুরী ঘাট, নাপিতের ঘোনা ও মার্দাশা এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে মা মাছ ডিম ছেড়ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। আর ডিম সংগ্রহকে কেন্দ্র করে হালদা পাড়ে মানুষের ঢল নেমেছে। তাদের সঙ্গে প্রশাসনের কর্মকর্তারাও আছেন।

এদিকে বংশ পরম্পরায় চলে আসা রেওয়াজের পাশাপাশি আধুনিক পদ্ধতিতে এসব ডিম থেকে রেণু তৈরি, এরপর পোনা উৎপাদন করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে যে হারে ডিম পাওয়া যায় সে হারে রেণু হয় না। অনেক ডিমই তাপমাত্রা, আবহাওয়া, লবণাক্ততাসহ বৈরী পরিবেশে নষ্ট হয়ে যায় বলে জানান ডিম সংগ্রহকারীরা।

ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, ‘সব নৌকা এবং আহরণকারীরা এখন নদীতে আছেন। দুপুরের পর থেকে ডিম সংগ্রহ করে তারা তীরে আসতে শুরু করেছেন। তখন কি পরিমাণ নৌকায় কত ডিম সংগ্রহ হয়েছে সেটা জানা যাবে। তবে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, প্রায় ৩শ নৌকায় দেড় হাজার মৎস্যজীবী ডিম সংগ্রহ করছেন। এবার ডিম সংগ্রহ বেশি হতে পারে। যা ১২ থেকে ১৪ হাজার কেজি’র মতো আশা করা হচ্ছে। কারণ এবার নদী দূষণকারী দু’টি প্রতিষ্ঠান (বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পেপারমিল) বন্ধ রয়েছে। করোনায় লকডাউনের কারণে নদী সংলগ্ন বিভিন্ন কারখানার দূষণও নেই। ড্রেজার চলাচল বন্ধ ও মা মাছের মৃত্যু তুলনামূলক কম হওয়ার বেশি ডিম পাওয়ার আশা দেখছেন।

তিনি আরও বলেন,’প্রতিবছরের চৈত্র থেকে আষাঢ় মাসের মধ্যে পূর্ণিমা-অমাবস্যার তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢল নামে হালদা নদীতে। আর তখনই তাপমাত্রা অনুকূলে থাকলে ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ। মধ্য এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে হালদায় ডিম ছাড়ে মা মাছ।তবে এবার অমাবস্যা তিথি থাকলেও বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢল ছাড়াই মা মাছ ডিম ছেড়ে দিয়েছে। প্রথমে বৃহস্পতিবার (২১ মে) গভীর রাতে নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ। সকালে পূর্ণমাত্রায় ছেড়ে দেওয়া হয়। ‘সংগ্রহ করা ডিম থেকে রেণু ফোটানো হবে। পরিচর্যার মধ্য দিয়ে সেই ডিম থেকে পোনা হবে। ডিম ফোটানোর জন্য তিনটি হ্যাচারি ও ৬০টি কুয়া প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে আরও কুয়া প্রস্তুত আছে।’

হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘সাধারণত পূর্ণিমা বা অমাবস্যার তিথিতে ভারি বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢল নামলেই মা মাছ ডিম ছাড়ে। তবে ব্যতিক্রমও হয়। সাধারণত নদীর পরিবেশ ডিম ছাড়ার উপযুক্ত হলেই মা মাছ ডিম ছেড়ে দেয়। আর পরিবেশ উপযুক্ত কি না, সেটা দেখতে প্রথমে অল্প পরিমাণে ছাড়ে। সেটাকে স্থানীয়রা নমুনা ডিম বলে থাকেন।’

উল্লেখ্য, গত বছর প্রায় ৭ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল হালদা থেকে। ২০১৮ সালে স্থানীয়রা ডিম সংগ্রহ করেছিলেন ২২ হাজার ৬৮০ কেজি। এর আগে ২০১৭ সালে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি।

গত বছর অনাবৃষ্টি, মা মাছের মৃত্যু, দূষণ, চলমান তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজে ড্রেজার ও নৌযান চলাচল বৃদ্ধি এবং ‘কুম’ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ডিমের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গিয়েছিল। তবে এবার প্রকৃতি ‘সদয়’ থাকলে আরও বেশি ডিম ও রেণু মিলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন