ঢাকা | বৃহস্পতিবার
১০ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২৬শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাভার-আশুলিয়ায় দৃষ্টির আড়ালে এডিস মশার প্রজননস্থল

সাভার-আশুলিয়ায় ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশার সম্ভাব্য অনেক প্রজননস্থলে মশা নিধনে কোন উদ্যোগ এখনো লক্ষ্য করা যায়নি। বহু জায়গায় মশার লার্ভা খালি চোখেই দেখা যায়।

সাভারের বাইপাইল থেকে আশুলিয়া বেড়িবাঁধ এবং শিমুলতলা থেকে থানা ষ্ট্যান্ডসহ হেমায়েতপুর থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে দেখা যাবে মশার বহু প্রজনন স্থল। সেখানে রয়েছে শতাধিক ওয়ার্কশপ এবং পুরনো টায়ারের দোকান। বিপুল পরিমাণ পরিত্যক্ত টায়ার একসঙ্গে ফেলে রাখা হয়েছে। বৃষ্টির পানি জমে আছে বেশিরভাগে।

ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা যেসব জায়গায় জন্ম দিতে পারে, তার একটি হলো পরিত্যক্ত টায়ার। সরকার নাগরিকদের এই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সতর্ক বার্তায় বলে যাচ্ছে, কেউ যেন পরিত্যক্ত টায়ার এখানে সেখানে ফেলে না রাখেন। কিন্তু পরিত্যক্ত টায়ারের দোকানিদের মধ্যে এ নিয়ে একেবারেই কোনো ভাবান্তর নেই।

এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পরে থাকা টায়ারে বেশ কিছুদিনের পুরনো পানি জমে আছে। আর এই পানিতে মশার লার্ভা থাকার বিষয়টি খালি চোখেই দেখা যায়।

আশপাশের লোকজন জানালেন, এসব এলাকায় মশার প্রকোপ ব্যাপক। কিন্তু সর্বশেষ কবে ওষুধ ছিটানো হয়েছে, সে বিষয়ে কেউ জানাতে পারেননি।

শিমুলতলা এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল আবির বলেন, ‘আমাদের এখানে এখনো কোনো মশার ওষুধ দেয়নি। যারা ওষুধ দেয়, এখন পর্যন্ত তাদের কাউকে দেখিওনি।’

একই তথ্য জানিয়েছেন আশুলিয়ার ইউনিক এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী মুহিবুল হক। তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যার পর মশার যন্ত্রণায় দোকানে বসা যায় না। কাস্টমারও বসতে পারে না, আমিও বসতে পারি না। কিন্তু এখনো কেউ মশার ওষুধ দিতে আসে নাই।’

বলিয়ারপুর বাসস্ট্যান্ডের সঙ্গেই ওয়ার্কশপগুলোতে স্তুপ করে রাখা অনেক পুরনো টায়ার। এসব টায়ায়ের স্তুপ বহুদিন ব্যবহার হয় না। খোলা অবস্থায় পরে থাকায় তার ভেতরে জমছে বৃষ্টির পানি। এই পানিতেও মশার লার্ভা দেখা যায়।

মশা জন্মানোর আরও একটি স্থান পাওয়া গেছে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে। ইন্টারনেট কোম্পানিরগুলো এসব খুঁটিতে স্থাপন করে তাদের ইন্টারনেট সংযোগের বাক্স। সাভার-আশুলিয়ার প্রায় সব এলাকাতেই এমন বাক্স দেখা গেছে।

বৃষ্টিতে এসব বক্সে জমা পানিতে এডিস মশা জন্ম নেয়াটা অসম্ভব নয় বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ঘরের ভেতর, ছাদ বা বাড়ির আঙ্গিনা ছাড়াও বাইরের নানা স্থানেও এডিস মশার জন্ম হতে পারে। কিন্তু এসব জায়গা নজর এড়িয়ে যায়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বিশিষ্ট কিটতত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, এডিস মশা যেখানে ডিম পাড়ে, কিংবা বংশ বিস্তার করে, সেই জায়গাটা যদি আমরা তার জন্য অনুপযোগী করে দিতে পারি তাহলে তাকে আটকানো সম্ভব।

তিনি জানান, এখানে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য আসলে কোন কার্যক্রমই নেই। কারণ মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য যে কার্যক্রম নেয়া হয় সেটা শুধুমাত্র কীটনাশক দিয়ে মশা দমন। যার মাধ্যমে আসলে কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণ করে। ড্রেন, ডোবা, নালা বা রাস্তার আশেপাশে যে কীটনাশক স্প্রে করা হয়, সেটা হচ্ছে কিউলেক্স মশা আবাসস্থল। কিন্তু এডিস মশার আবাসস্থল হচ্ছে মানুষের বাড়ি, বাড়ির চারপাশে বিভিন্ন পাত্রে জমে থাকা পানি।

অধ্যাপক বাশার আরো বলেন, বাংলাদেশে এডিস এই প্রথম নয়, এর আগেও দেশে ডেঙ্গু দেখা গেছে। আগামীতেও যে দেশে এর প্রাদুর্ভাব দেখা যাবে না, তাও নিশ্চিত নয় বলে জানান তিনি। তাই তিনি মনে করেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কর্মী দরকার এবং বিশেষ জায়গায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার কিন্তু সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো করেনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন