ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ত্রাণের স্লিপ বিক্রির ঘটনা ধামাচাপা দিতে দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলন

নীলফামারীর সৈয়দপুরে উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি কর্তৃক করোনায় বিপর্যস্ত কর্মহীন ক্ষুধার্ত মানুষের মাঝে সরকারী ত্রাণের স্লিপ বিক্রির সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ এবং তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার প্রেক্ষিতে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলন করা হচ্ছে। সে সাথে ব্যক্তিগত দোষ ঢাকতে সংগঠনকে ব্যবহার করে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে প্রভাবিত করার লবিং চলছে।

পাশাপাশি বিষয়টিকে দলের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র ও দলীয় ভিন্ন গ্রুপের চক্রান্ত বলে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। একইসাথে সংবাদটি প্রকাশকৃত সংবাদকর্মীদের মিথ্যেচার দিয়ে হেয় করাসহ দেখে নেয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যা দলের একনিষ্ঠ ত্যাগী নেতা-কর্মী ও সাধারণ সচেতন মহলের মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। চরম সমানালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অফিস, বাজার, পাড়া-মহল্লায় এবং ব্যক্তিগত পারস্পারিক মুঠোফোন আলাপচারিতায়।

গত শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) কয়েকটি দৈনিক পত্রিকাসহ অসংখ্য অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত হয় সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি ও হাজারীহাট মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসার জীব বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক এবং খাতামধুপুর ইউনিয়নের সাবেক মহিলা মেম্বার হাসিনা বেগমের স্বামী মোঃ আজম আলী সরকার কর্তৃক ত্রাণের স্লিপ ১শ’ টাকা করে বিক্রির সংবাদ।

সংবাদটি প্রকাশ হওয়া মাত্রই তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় খবরটি। চলতে থাকে কমেন্ট বক্সে সমালোনচনার ঝড়। এতে দেখা যায় সিংহভাগ মানুষই ঘটনাটির নিন্দা জানিয়ে এর বিচার দাবি করেন। এরই মাঝে দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী আমেনা কোহিনুর আজমের পক্ষ অবলম্বন করে স্ট্যাটাস দেন। যাতে তিনি এ ঘটনাকে আজমের বিরুদ্ধবাদীদের ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন।

এদিকে, পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি করে রাতেই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে অভিযোগকারীদের দু’একজনকে ধরে এনে থানায় জবানবন্দি নেওয়া হয় যে স্লিপ বিক্রির কোন ঘটনা ঘটেনি। এমতাবস্থায় ওই অভিযোগকারীদের স্লিপ ক্রয়ের স্বীকারোক্তিমুলক ভিডিও চিত্র প্রকাশ করে দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার সৈয়দপুর প্রতিনিধি মোঃ জাকির হোসেন। এরপর থেকে যেন লাইক, শেয়ার আর কমেন্টের বিশ্বকাপ লড়াই শুরু হয়ে যায় নীল-সাদা ফেসবুক জগতে।

এতে চরম বেকায়দায় পড়ে যায় আজম ও তার পক্ষাবলম্বনকারীরা। চলতে থাকে সংবাদ প্রকাশকারী সংবাদকর্মীদের ম্যানেজ করার তৎপরতা। কিন্তু তাতে সফল না হওয়ায় বাধ্য হয়ে পরের দিন সকালে আজম আলীর গ্রামের বাড়ি খাতামধুপুর ইউনিয়নের হাজিপাড়ায় স্বেচ্ছাসেবকলীগ পৌর কমিটির সহ-সেক্রেটারী রতনকে দিয়ে গুটি কয়েক সংবাদকর্মীকে নিয়ে করা হয় সংবাদ সম্মেলন। যা মাত্র দুটি অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশ করা হয় কোন প্রকার ছবি ছাড়াই।

এতে আবারও প্রশ্নের বাণ ছুড়তে থাকে ভার্চুয়াল ডিভাইস ইউজাররা। এবার আরও বেশি কোনঠাসা হয়ে পড়ে আজমের সহকর্মীবৃন্দ। তাই আজমকে বেকসুর দাবি জোড়ালো করতে চিন্তাভাবনার আপডেট করে ২০ এপ্রিল আবারও করা হয় সংবাদ সম্মেলন। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ’র ব্যানারে করা এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না খোদ সংগঠনেরই (উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ) সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম রয়েলসহ অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ। এতে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন আজম আলী সরকার। যাতে এ ঘটনাকে একই দলের প্রতিপক্ষ গ্রুপকে দোষারোপ করে সংবাদ প্রকাশকারী সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধ রাজনীতির সমর্থক আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন।

যদিও ওই সাংবাদিকদের তার সংবাদ সম্মেলনে ডাকা হয়নি। যাতে প্রকৃত সত্যের মুখোমুখি হয়ে আবারও বেকায়দায় পড়তে না হয়ে। ফলে একই বিষয় নিয়ে বার বার সংবাদ সম্মেলন করাসহ সত্যকে উপেক্ষা করে মিথ্যে দিয়ে ব্যক্তিগত অপরাধ ঢাকতে সংগঠনকে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী সমর্থক মহল থেকেই।

বিগত কয়েকদিন থেকে এ ঘটনাগুলো নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার টক অব দ্যা পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যা আগামীতে আরও কোন পর্যায়ে পৌছায় তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক কৌতুহল ও উৎসাহ পরিলক্ষিত হচ্ছে।

আনন্দবাজার/শাহী

সংবাদটি শেয়ার করুন