মিয়ানমারের বাস্তচ্যুত ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় ৩৪টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়। সেটিই এখন পৃথিবীর সবচেয় বড় শরণার্থী শিবির।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে সেখানকার অনেক স্থানীয় বাসিন্দা সেচ্ছায় নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু রোহিঙ্গাদের নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে এখন অতিষ্ঠ তারা। রোহিঙ্গাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বসতবাড়ি ও এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন স্থানীয়দের অনেকেই।
অপরদিকে গেল দু’বছরে ব্যাপক উন্নতি হয়ে রোহিঙ্গাদের জীবনের মান। সরকারি, দেশিবিদেশি সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগীতায় চলছে তাদের জীবন নামের রেলগাড়ি। স্থানীয়দের মতে, রোহিঙ্গা পরিবার গুলো স্বদেশী স্থানীয় পরিবার গুলোর থেকেও বেশি স্বচ্ছলভাবে জীবনযাপন করছে।
হয়তো সে কারনে স্থানীয়দের অনেকেই রোহিঙ্গা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। জানাগেছে, পেটের দায়ে পর্যাপ্ত সহযোগীতা পাবার আশায় তাদের এমন অনিচ্ছাকৃত আগ্রহের জন্ম।
করোনাভাইরাস (কোভিড ১৯) এর দাপটে বিশ্ব এখন অসহায়। ভাইরাসটি প্রকোপ দিনদিন বাংলাদেশেও বাড়ছে। বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর হার। এরই মধ্যে করোনার প্রভাবে অসহায় হয়ে পড়েছে দেশের অনেক খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। দেশের সর্বদক্ষিণ জেলা কক্সবাজার ও তার ব্যতিক্রম নয়।
কক্সবাজারে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে কিছু শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে অনেকই আত্মঘাতী ও ভুলভাল চিন্তায় মগ্ন।
তাদের একজন নাজনীন হ্যাপী। তিনি স্ব-পরিবার রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়ায় বসবাস করেন। হ্যাপী বলেন, তাদের ৮সদস্যের পরিবারে পুরুষ বলতে তার রিক্সাচালক বাবা। করোনায় লকডাউনের কারনে তিনি আর রিক্সা নিয়ে বের হন না। তাই আয় রোজগারের পথ বন্ধ। এখন খেয়ে না খেয়ে চলছে তাদের জীবন। হ্যাপীর মতে, রোহিঙ্গারা বেশ ভালো আছে। বেঁচে থাকতে হলে রোহিঙ্গাদের তালিকায় যদি অন্তর্ভুক্ত হওয়া ছাড়া বিকল্প দেখছেনা হ্যাপী।
রোহিঙ্গাদের প্রতিবেশী নুরুল বশর বলেন, করোনা প্রভাব যদি ৩ থেকে চার মাস স্থানীয় হয় রোহিঙ্গা ছাড়া সবাই না খেয়ে মারা যাবে। সরকার হয়তো কিছুটা সহযোগীতা করবে তবে তা খুবই নগণ্য। তাই রোহিঙ্গা হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে পারলে অন্তত জীবনে বাঁচা যাবে বলে মনে করেন তিনি। প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেছেন আরো অনেকই।
তবে কক্সবাজার জেলাপ্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেছেন, করোনার প্রভাব মোকাবেলায় সরকারের যথেষ্ট প্রস্তুুতি রয়েছে। কেউ না খেয়ে থাকবে না। তিনি বলেন, প্রশাসন রাতদিন মানুষের ঘরে ঘুরে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে। কেউ নাম ঠিকানা উল্লেখ করে ফোন বা এসএমএস করলেই তার বাড়িতে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
আনন্দবাজার/শাহী