পেশায় একজন মেথর। রতন শেখ দীর্ঘ প্রায় একযুগের বেশি সময় ধরে মানুষের বাসাবাড়ির ড্রেনে কিংবা ল্যাট্রিনে মানববর্জ্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজটিই করে আসছেন তিনি। সঞ্চয়ের সর্বস্ব দিয়ে দাঁড়িয়েছেন মানবতার পাশে।
সাভারবাসীর মাঝে রাতারাতি ‘হিরো’ বনে গেছেন এক মেথর। নিজের সঞ্চয়ের সর্বস্ব দিয়ে দাঁড়িয়েছেন মানবতার পাশে।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি কর্মহীন শতাধিক মানুষের মাঝে নিজেই তুলে দিয়েছেন পরিবার নিয়ে ১০ দিনের চলার মতো – চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ডিম ও হাত ধোয়ার সাবান। সামান্য একজন মেথরের এই মানবিকতাবোধ নজর কেড়েছে সবার ।
তিনি মো. রতন শেখ (৪৫)। সবাই তাকে চেনে সুইপার রতন শেখ হিসেবে।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থানার কাটাখালি গ্রামের আলিমুদ্দিন শেখের ছেলে রতন শেখ পরিবার-পরিজন নিয়ে মাত্র আড়াই হাজার টাকায় ভাড়া থাকেন সাভার পৌরসভার জামসিং জয়পাড়া আব্বাস ফরাজীর বাড়িতে।
সেই আক্ষেপ থেকেই রতন শেখ বলেন, আমরা অত্যন্ত নিম্ন আয়ের মানুষ। আমরা বুঝি এসময়টাতে মানুষের কত কষ্ট। আর সেই কষ্ট দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। জমানো ২৫ হাজার টাকা দিয়ে প্রয়োজন মাফিক চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ডিম ও হাত ধোয়ার সাবান নিয়ে ছোট ছোট পরিবার গুলোর পাশে এসে দাঁড়িয়েছি।
শনিবার (৪ এপ্রিল) বিকেল থেকেই সাধ্যমত মানবিক সহায়তা নিয়ে শতাধিক নিম্ন আয়ের মানুষদের বাড়ি বাড়ি যান রতন শেখ। কাজটি গোপনেই করছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত তা আর গোপন থাকেনি। মুখে মুখে রটে যায় সুইপার রতন শেখের এই মানবিকতার কথা।
রতন শেখ এভাবে বাড়ি বাড়ি নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন সেটা নজরে আসার পর অনেকেই বিষয়টি তুলে ধরে ফেসবুকে পোস্ট করে। তারপর থেকেই নেটিজেনদের (ইন্টারনেট জগতের বাসিন্দা) প্রশংসায় ভাসছেন রতন শেখ। কেউ কেউ মন্তব্য করছেন সময়ের আসল হিরো এই রতন শেখ।
সামান্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে যারা মানুষের সঙ্গে তামাশা করেন, নিজেদের সামান্য অবদানকে অনেক বড় জাহির করে প্রচারের আলোয় আসার চেষ্টা করেন তাদের জন্য এক শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত রতন শেখ।
আনন্দবাজার/শাহী