পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে অবস্থিত দেশের একমাত্র পরিকল্পিত বৃহৎ কাপ্তাই হ্রদে এখন সবুজ ফসলের সমারোহ। বিভিন্ন ফসল করে ব্যাপক ফলন হলেও পাহাড়ের কৃষকদের মুখে নেই আনন্দের হাসি, এ যেন হরিষে বিষাদ। তারা উৎপাদিত ফসল ঘরে তুললেও বর্তমান হাটবাজার বন্ধ থাকায় ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারছে না।
প্রতি বছরের ন্যায় ফেব্রুয়ারি হতে এপ্রিল পর্যন্ত প্রচন্ড খড়া তাপ ও বৃষ্টিপাতের অভাবে বৃহৎ কাপ্তাই হ্রদ শুকিয়ে যায়। পানি শুকিয়ে যাওয়ায় জেগে উঠে চর, সেই চরে পাহাড়ের কৃষকরা তাদের ধান, ভুট্রা, বড়বটি, লালশাক, ঢেঁড়শ, কড়লা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, তরমুজসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করেন।
ইতিমধ্যে অনেক কৃষক বিভিন্ন ফসল ও নানা ধরনের সবজি চাষ করে বেশ কিছু অর্থ উপার্জন করলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই বিক্রি প্রায় বন্ধ। শত কস্টের ফসল চাষ করেও বর্তমান করোনা পরিস্থিতি কৃষকের অর্জিত ফসল হাট-বাজারে বিক্রয় করতে না পেরে মাথায় বজ্রপাতেরর মতো ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন সবজি ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই পঁচে নস্ট হয়ে যাচ্ছে।
উপজাতীয় কৃষক সংখইউ মারমা, তাজপ্রুখই মারমা ও লক্ষী চাকমা এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা প্রতি বছর অপেক্ষা করি কখন কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকাবে। সেই শুকিয়ে যাওয়া জমিতে ফসল করে এবং এ ফসল বিক্রয় করে ১লা বৈশাখ (বাংলা নববর্ষ) পালন, ছেলে মেয়ের স্কুল খরচ, বিভিন্ন দেনা পরিশোধ ও নতুন বছরের নতুন সাজে বরণ করার সকল পরিকল্পনা করে থাকি। বর্তমান মহামারি করোনার কারনে সব হাট-বাজারসহ বিভিন্ন কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের সেই হাঁসি আর হাঁসি নেই বলে জানান। অনেক ফসল হয়েছে তবে বিক্রয় করতে না পাড়ায় ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই নস্ট হচ্ছে বলে জানান কৃষকেরা।
কৃষক শাহাবউদ্দিন, শাহাবাজ আলী আক্ষেপ করে জানান, আমরা নতুন করে আর কিছু চাষ করবো না। কারন বাজারে লোকজন নেই, হাট-বাজার বন্ধ। তাই উৎপাদন করে লাভ কি?
তারা জানান, এবার কাপ্তাই হ্রদে বিভিন্ন ফসলের চাষ ভালো হয়েছিল কিন্ত মরণব্যাধি করোনার কারনে আমরা লাভের মুখ দেখবো না। এই অবস্থায় প্রান্তিক কৃষকরা সরকারের নিকট কৃষি প্রনোদনার জন্য দাবি জানান।
এদিকে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কাপ্তাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সামসুল আলম চৌধুরী জানান, আমাদের সহযোগীতায় কৃষকরা প্রতি বছরের ন্যায় এই বছরও ভালো ফলন করেছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতির কারনে উৎপাদিত ফসল বিক্রয় খুব কম হচ্ছে, তবে এটা অচিরেই কেটে উঠবে। তিনি জানান, কৃষি বিভাগ সবসময় কৃষকদের পাশে আছে এবং থাকবে।
আনন্দবাজার/শাহী