বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে পৌষ-মাঘ মাসেই পানি শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হতো ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া টাঙ্গন নদী। পানি নদী বয়ে চলে যেত ভারতে। কিন্তু উপজেলার সাগুনী এলাকায় ওই নদীতে সাগুনী রাবার ড্যাম নির্মিত হওয়ায় এখন আর সে অবস্থা নেই। ড্যামের রাবার ফুলিয়ে পানি আটক করায় এর উজানে ফাল্গুন মাসেও ভরা পানিতে নদী এখন টইটম্বুর। সেই পানি দিয়েই নদীর দু’ধারে ১০/১২টি গ্রামের প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে চলছে কৃষি চাষাবাদ।
বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বলছেন, রাবার ড্যামের উজানে ৮টি লো লিফ্ট পাম্প বসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে নদীর জমানো পানি বোরো সহ রবি ফসলি জমিতে সেচ কার্যক্রম চালু রয়েছে। এদিকে নদীতে ধরা পড়ছে দেশি প্রজাতির প্রচুর মাছ। পরিবর্তন এসেছে জীববৈচিত্রেও। অপরদিকে ড্যামের ভাটিতে এখন এর পুরো উল্টো চিত্র। ড্যামের রাবারের উপর দিয়ে গড়িয়ে পড়া বাড়তি পানি বইছে ক্ষীণ ধারায়। দেখে মনে হচ্ছে যেন মরা খাল।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, টাঙ্গন নদী ক্রমেই ভরাট হওয়ার কারণে পৌষ-মাঘ মাসেই নদীর পানি শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হতো। ক্ষীণ ধারায় প্রবাহিত নদীর পানি গড়িয়ে চলে যেত ভারতে। এ অবস্থায় খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি নদীতে রাবার ড্যাম নির্মান প্রকল্পের আওতায় কৃষি মন্ত্রনালয়ের অধীনে ২০১৫ প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে টাঙ্গন নদীতে ৯০ মিটার দীর্ঘ সাগুনী রাবাম ড্যাম নির্মান করা হয়। কয়েক বছর রাবার ড্যামটি পরীক্ষা মূলকভাবে চালু করা হলেও এবার পুরোদমে চালু হয়েছে। আগে এ সময়ে নদীটি শুকিয়ে গেলেও বর্তমানে রাবার ড্যামের রাবার ফুলিয়ে পানি আটক রাখার ফলে ড্যামের উজানে নদী ফিরে পেয়েছে ভরা যৌবন। দেখে মনে হয় বষাকাল।
এরই মধ্যে সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কতৃপক্ষ এ রাবার ড্যামের উজানে টাঙ্গন নদীতে ৮টি এল এল পি (লো লিফ্ট পাম্প) স্থাপন করেছেন যা চলতি বোরো মৌসুমে পুরোপুরি চালু করা হয়েছে। নদীতে মজুদ করা সেই পানি দিয়েই নদীর দুধারে সাগুনি, বাঁশগাড়া, চাপোড়, মছলন্দপুর, মশালডাঙ্গী, মালঞ্চা, নাকাটি, ফুটকিবাড়ি, ভামদা, সুলতানপুর, সেনিহারি সহ ১০/১২টি গ্রামের বিশাল এলাকা জুঁেড় জমিতে চলছে চাষাবাদ। যা আগে পড়ে থাকত অনাবাদি হিসেবে। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলেদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর দেশি মাছও।
সাগুনী রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা পরিব উদ্দীন বলেন, গত বছর থেকে রাবার ড্যামে সুফল পেতে শুরু করেছে এলাকার লোকজন। এরই মধ্যে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমি রাবার ড্যামের সেঁচের আওতায় রয়েছে। কৃষকদের খরা মৌসুমে আর পানির কোন সমস্যা হচ্ছে না। এছাড়াও নদীতে পানি থাকায় দেশি প্রজাতির মাছও ধরা পড়ছে। জেলেরাও এর সুফল ভোগ করছে। এর আগে নদীর পানি ভারতে চলে যেত। এখন সেই পানি আমরা ব্যবহার করতে পারছি।
বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পীরগঞ্জ ইউনিটের সহকারী প্রকৌশলী খায়রুল আলম বলেন, ভু-উপরিস্থ পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে টাঙ্গন নদীর রাবার ড্যাম এলাকায় ৮টি লো লিফ্ট পাম্প বসানো হয়েছে। এতে ২০ হাজার কৃষক তাদের জমিতে সেঁচ দিতে পারছে। তাছাড়া নদীতে প্রচুর পানি থাকায় আশে পাশের গ্রামে ভূগর্ভস্থ পানির স্থর উপরে উঠে এসেছে।
পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সারওয়ার বলেন, রাবার ড্যাম এলাকায় ভূ-গর্বস্থ পানির স্তর উপরে উঠে এসেছে। এর কারণে টাঙ্গন নদীর দু’ধারের জমিতে এখন যেকোন ধরনের ফসলের দ্বিগুণ ফলন হবে। তাছাড়া ভুগর্ভস্থ পানিতে আয়রন থাকার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু নদীর পানিতে কোন আয়রন থাকে না এতে ফলন বাড়বে। সেঁচের খরচও কম হবে।
আনন্দবাজার/শাহী