সরকার হিজড়া জনগোষ্ঠিকে ট্রান্সজেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গ ঘোষণার মাধ্যমে সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। পরিবারের কাছে ফিরিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শিক্ষার সুযোগ, বাসস্থান, কর্মসংস্থান ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম।
অন্যদিকে আমরা ভিক্ষাবৃত্তি চাইনা, ভালোভাবে বাঁচতে চাই, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আমাদের প্রয়োজন সরকারি চাকরিসহ স্থায়ী কর্ম-সংস্থান, আবাসন ও শিক্ষার সুযোগ, এমন দাবী হিজড়াদের। হিজড়া পরিচয়ে একটি গোষ্ঠি নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ড করছে। ডাক্তারী পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত হিজড়া সনাক্ত করে তাদের প্ররিচয় পত্র দেয়া হলে হিজড়াদের নামে বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ড কমবে বলে মনে করেন ট্রান্সজেন্ডার ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভানেত্রী কাজলী হিজড়া, হাসি, সুবর্ণা ও মৌসুমী হিজড়া।
হিজড়া জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নে দর্জিবিজ্ঞান প্রশিক্ষণ, কাউন্সিলিং ও মটিভেশন ক্লাস শেষে গতকাল মঙ্গলবার উপকরণ ও পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভাওয়াল রাজবাড়ি নাট মন্দিরে প্রশিক্ষণ নেয়া ৫০ জন হিজড়ার হাতে উপকরণ তুলে দেন জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম ও গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএম সহ অতিথিরা।
জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক (উপসচিব) দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জেলা সমাজসেবা উপ-পরিচালক এস এম আনোয়ারুল করিম, প্রশিক্ষণ প্রদানকারী বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) গণসেবা সংস্থার মহাসচিব মোঃ শফিকুর রহমান সিদ্দিকী, ট্রান্সজেন্ডার ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভানেত্রী কাজলী হিজড়া, হাসি, সুবর্ণা ও মৌসুমী।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএম বলেন, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে হিজড়ারা দলবেধে ভিক্ষাবৃত্তি ও চাঁদাবাজিসহ সমাজে নানা রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। তাদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। পুলিশ সুপার বলেন তাদেরকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
গণসেবা সংস্থার মহাসচিব মোঃ শফিকুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, সমাজের অবহেলিত তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) জনগোষ্ঠির সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে জীবনমান উন্নয়নে কর্মমূখী ও কারিগরি শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। আমাদের ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা হিজড়াদের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছিল উদ্যোগ নিলে তাদেরকে(হিজড়া) স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা বিভাগের সহযোগীতায় মহানগরের কোনাবাড়ি এলাকার বেসরকারি সংস্থা(এনজিও) গণসেবা সংস্থা এই কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি।
ইতোমধ্যেই তিনটি ব্যাচে মোট ১৫০ জন হিজড়াকে সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়েছি। সরকারের এই প্রকল্পটিতে প্রশিক্ষণ সফলতার হার প্রায় শতভাগ বলে দাবী করেছেন প্রশিক্ষণ প্রদানকারী সংস্থার মহাসচিব মোঃ শফিকুর রহমান সিদ্দিকী। তবে পূণর্বাসন ও স্ব-কর্মসংস্থানের বিষয়ে এ প্রকল্পটির সফলতার হার অনেক কম বলে তিনি স্বীকার করেন।
সেলাই প্রশিক্ষণ নেয়া প্রস্তাবিত ট্রান্সজেন্ডার ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভানেত্রী কাজলী জানান, তারা সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তবে জীবন জীবিকার জন্য সেলাই কাজ বেছে নেয়া কষ্টকর হবে। শংসয় রয়েছে, তার কাছে কে কাপড় সেলাই করতে দেবে। ভালো ভালো টেইলারের দোকান বাদ দিয়ে একজন হিজড়াকে কে কাপড় সেলাই করতে দেবে ? সেলাই প্রশিক্ষণ ছাড়াও যদি আমাদের হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল পালন, কম্পিউটার চালনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, তাহলেও উপকৃত হতাম। আমাদের থাকার জায়গা নেই। সরকার হিজড়া পল্লী স্থাপন করে যদি আমাদের থাকার জায়গা করত, সেখানে হাঁস মুরগী, গরু-ছাগল পালনের ব্যবস্থা করে দিত, তবে ভিক্ষা করা ছেড়ে দিতাম।
আনন্দবাজার/শহক