ঢাকা | রবিবার
২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শৈলকুপায় মানুষ এখন হাসপাতালমুখি: বদলে গেছে স্বাস্থ্যসেবা

প্রায় ৪ লাখ মানুষের উপজেলা ঝিনাইদহের শৈলকুপা। শিক্ষা সংস্কৃতির পাশাপাশি বদলে গেছে উপজেলা হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার মান। থানা সদরের সাথে ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির সড়ক যোগাযোগ তুলনামূলক ভাল হওয়ার সাথে বছরের শুরুতেই হাওয়া লেগেছে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। দীর্ঘদিন জনবল শুন্যতার ভোগান্তি পেরিয়ে শুধু হাসপাতালের ভিতর বাহির নয় নিয়ম-শৃঙ্খলাতেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।

সাধারণ মানুষ এখন হাসপাতালমুখি, সেবাও পাচ্ছে ভাল এমনটাই জানা গেছে সরেজমিন ঘুরে। বর্তমানে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট শৈলকুপা হাসপাতালের চিকিৎসক ২২ জন, নার্স সংখ্যা ২৩ জন, অন্যান্য শাখায় কর্মরত কর্মচারীও সন্তোষজনক। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চালু হয়েছে এক্সরে, ইসিজি, আল্ট্রাসনো ও নিয়মিত অপারেশন। একঝাঁক মেধাবী চিকিৎসক সেবার ব্রত নিয়ে সর্বপ্রথম যোগদান করেছেন শৈলকুপা হাসপাতালে।

চিকিৎসকদের মধ্যে একজন ডাঃ এসএম আসাদুল্লাহ জানান, মানবসেবার ব্রত নিয়ে এ হাসপাতালে তিনি যোগদান করেছেন। ইনডোর আউটডোরসহ বিভিন্ন সময় অসময়ে ডাক পড়লেই রোগী দেখে থাকেন। ডাঃ একেএম সুজায়েত হোসেন, ডাঃ আকাশ আহম্মেদ আলীফ, ডাঃ নুসরাত আহম্মেদ রুমানা জানান চাকুরি জীবনের প্রথম পোষ্টিংএ আসা এ হাসপাতাল ঘিরে তাদের অনেক স্বপ্ন। বেশিরভাগ উদ্যেমী আর প্রগতিশীল চিন্তা থেকে তারা নির্দিষ্ট দায়িত্ব ছাড়াও সময় পেলে রোগী দেখার কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করছেন।

ডাঃ তৌকির আহম্মেদ জানান, অনেক সময় একাধিক ডাক্তার ইমারজেন্সীতে রোগীর জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। স্বাচ্ছন্দে চলছে গোটা আউটডোর, এখন আর আগের মত রোগীদের অভিযোগ নেই, চিকিৎসাও পাচ্ছেন তুলনামূলক ভাল। তিনি বলেন, হাসপাতালের নামে অনলাইনে একটি ফেইসবুক পেজ খোলা হয়েছে, যেখানে রোগীদের সুবিধ অসুবিধা ও বিভিন্ন মতামত গ্রহণ ছাড়াও প্রয়োজন বুঝে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচার চালানো হয়। আরএমও রাকিবুদ্দিন রনি জানান, প্রধান ফটক থেকে গোট হাসপাতাল আঙ্গিনা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকে। হাসপাতাল দালাল মুক্ত করে সময়পোযোগি করে তোলা হয়েছে, বৃদ্ধি পেয়েছে রোগি ও তাদের সেবার মান। আউটডোরে গড়ে প্রতিদিন ৩ শতাধিক রোগি তাদের বিভিন্ন সমস্যার সেবা পাচ্ছেন।

বন্ধেখালী গ্রাম থেকে মেয়ে, নাতনী ও স্বামীকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে আসা নূরী খাতুন জানান, হাসপাতাল বিমুখ ছিলেন বহুদিন এক প্রতিবেশির কথামত গতকাল হাসপাতালে এসে তিনি হতবাক। সবাই তাৎক্ষনিক ডাক্তার দেখিয়ে কিছু ঔষুধ পেয়ে বেজায় খুশি। হাটফাজিলপুর গ্রামের আবু সাইদ জানান, তার স্ত্রীকে এনেছিলেন আল্ট্রাসনো করতে যা বাইরের ক্লিনিক থেকে সাড়ে ৩ থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত খরচ হতো এখনো ১১০ টাকায় খুব সহজেই করতে পেরেছেন। কুশোবাড়িয়ার আঃ রাজ্জাক জানান, শৈলকুপা হাসপাতালে হোমিও চিকিৎসক দেখাচ্ছেন এখন বেশ সুস্থ। শীতালী গ্রামের সেলিনা খাতুন জানান, হাসপাতালে আগের মত হৈচৈ নেই লাইন ধরে দালাল ছাড়াই ভাল সেবা পাচ্ছেন। শুধু উপজেলা সদরেই নয় ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবার প্রতিষ্ঠান গুলোতেও এসেছে অনেক পরিবর্তন। নিয়ম করে সেখানেও যাচ্ছেন ডাক্তারগণ, ভালভাবে বিতরণ হচ্ছে সরকারি ঔষুধপত্র।

শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্যসেবার এ প্রতিষ্ঠান (টিএইচও) প্রধান ডাঃ রাশেদ আল মামুন জানান, তিনি যোগদানের পর থেকেই সেবার মানবৃদ্ধিতে সর্বাত্বক চেষ্টা করছেন। তাঁর মতে হাসপাতালের স্যানিটেশন ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করা এবং বর্তমান রান্নাঘরটি স্থানান্তর অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে। ডাক্তারের পাশাপাশি রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে, হাসপাতালে আরো একটি এ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন। বাংলাদেশের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় ১৯ নম্বর র‌্যাংকিং এর থাকা শৈলকুপা হাসপাতালের অটোক্লেভ মেশিনটি অচল পড়ে আছে, বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন। জাতীয় প্রসূতি সেবায় পুরুস্কারপ্রাপ্ত শৈলকুপা হাসপাতালের বর্তামন ডাক্তার অনুযায়ী তীব্র আবাসন সংকট দেখা দিয়েছে, সে বিষয়ে তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।

আনন্দবাজার/শাহী

সংবাদটি শেয়ার করুন