ড. আবরার জানান, সময়স্বল্পতার কারণে ২০২৬ সালের পাঠ্যবই চলমান কারিকুলাম অনুযায়ী ছাপানো হলেও, পূর্ববর্তী সাধারণ ভুলভ্রান্তি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার। তিনি বলেন, সামান্য ভুলসহও পাঠ্যবই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে আমার মন সায় দিচ্ছে না। যত কষ্টই হোক, বইগুলো নির্ভুল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বুধবার (৪ জুন) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের সামনে এসব কথা বলেন তিনি।
পাঠ্যবই সংশোধনের পাশাপাশি শিক্ষা উপদেষ্টা ড. আবরার পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিয়েও আশার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের মতো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নকলের ঘটনাও উল্লেখযোগ্য ছিল না। আমরা আশা করছি, এইচএসসি পরীক্ষাও একইভাবে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।’
শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে ড. আবরার বলেন, ‘আমার জীবনের বড় অংশ আমি উৎসর্গ করেছি শিক্ষার উন্নয়নে। বর্তমান দায়িত্বে থেকেও আমি চেষ্টা করছি কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনতে। আমাদের লক্ষ্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা।’
তিনি বলেন, ‘কারিকুলামের মানোন্নয়ন, অনলাইন শিখনের বিস্তার, বিজ্ঞান-প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষার বিকাশ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা-এই সবই আমাদের স্বপ্নের অংশ।’
কারিগরি শিক্ষাকে সামনে রেখে উপদেষ্টা জানান, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, গ্লাস-সিরামিক, চামড়া ও ওষুধ শিল্পসহ বিভিন্ন খাতের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পরামর্শ করে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, দেশি-বিদেশি শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে কর্মশালা এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
নারী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার কথাও জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষাকে জনপ্রিয় করতে হলে নারীদের সম্পৃক্ত করতে হবে। প্রতিবন্ধী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকেও এ ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে ড. আবরার জানান, ‘আমরা ইউজিসি, মন্ত্রণালয় ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠন করেছি। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে আগ্রহীদের আবেদন আহ্বান করা হবে। যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ হলে আমাদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব দেশেই তৈরি হবে।’
সম্প্রতি প্রকাশিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘অর্থনীতি বিষয়ক শ্বেতপত্র ও টাস্কফোর্সের রিপোর্টে শিক্ষাখাতের ওপর যেসব সুপারিশ এসেছে, তা ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
এছাড়া অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার বন্ড ও ২০০ কোটি টাকার নগদ বরাদ্দ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি একটি বড় পদক্ষেপ যা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হবে।’
অনুষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের ও কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।