ঢাকা | সোমবার
২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে ভারতকে চিঠি দেওয়া বিবেচনায় নাই: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ঢাকা : ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাংলাদেশের কোনো সমস্যা দেখছেন না এবং এই বিষয়ে ভারতকে চিঠি দিয়ে জানানো এই মুহূর্তে বিবেচনায় নাই বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে আমরা সকল ব্যবস্থা নিচ্ছি। সমন্বয় করে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবো।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ সব কথা বলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্টের বাতিলের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, হঠাৎ করেই আমাদের ওপর আরোপ হয়েছে। সাথে সাথেই আমরা আমাদের সকল অংশিজন নিয়ে গতকাল রাতেই সভা করেছি। এটাতে কোনো সমস্যা বোধ করছি না। আমাদের নিজস্ব সক্ষমতায় যেন কোনো ঘাটতি না পরে। আমাদের রপ্তানির ক্ষেত্রে যোগাযোগের যেন কোনো ঘাটিত না পড়ে। সেক্ষেত্রে আমরা সকল ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা আশা করছি এ সমস্যা থেকে উৎরে উঠব।

তিনি বলেন, আমার বিষয় হচ্ছে বাণিজ্যিক সক্ষমতা। আমি বাণিজ্যকে কিভাবে অন্তর্ভুক্তিমুলক ও প্রতিযোগিতা মূলক কিভাবে করতে পারি সেটার মধ্যেই নিদিষ্ট থাকি। আমি সেখানেই নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাচ্ছি।

ভারতের সাথে এই তিনটি বন্দর দিয়ে বাণিজ্য ভলিউম কতো ছিলো জানতে চাইলে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আমাদের ৪০ থেকে ৫০ হাজার টন পণ্য ভারতের রুট বা পোর্ট ব্যবহার করে বিশেষ করে দিল্লি, কোলকাতা ও ব্যাঙ্গালোরের পোর্ট ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানি হতো। আমরা আশা করছি নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে এই পণ্য আমরা নিজেরাই রপ্তানি করতে পারবো। এই সমস্যা অতি দ্রুত সমাধান হবে।

কতোগুলো দেশে পণ্য রপ্তানি হতো এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, মুলত ইউরোপের দেশ গুলোতে বেশি রপ্তানি হতো।

ট্রান্সশিপমেন্ট নিয়ে তিনি বলেন, ভুটান নেপালে ট্রান্সিপমেন্টের আওতায় ভারতের রাস্তা ব্যবহার করে যেসব পণ্য যেতে সেখানে সমস্যা হয়নি। যেটা হয়েছে বিমানবন্দর রিলেটেড।

যুক্তরাষ্ট্র যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলো সেটা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন এবিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এটা ভালো খবর। এরফলে আমাদের বাণিজ্যে স্থিরতা দেখা দেবে। গতকাল রাতেও আমাদের সাথে ইউএসটিআর এর সাথে বৈঠক হয়েছে অনলাইনে। আমরা আমাদের কর্ম সমষ্টিগুলো নিয়ে কাজ করছি। যখন সম্ভব আমরা দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রে নিজেরাও যাবো, গিয়ে আমরা আমাদের অবস্থান তুলে ধরবো।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, স্থগিতাদেশ তো সাময়িক সময়ের জন্য। এ বিষয়ে আমাদের দীর্ঘ মেয়াদে করণীয় আছে, তাদের আকাঙ্ক্ষা তো শেষ হয়ে যায়নি। সেই আকাঙ্ক্ষাগুলোকে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ওপর ভিত্তি করে কতটুকু করতে পারব- সেই বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করছি এবং সেই অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের মূল আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে বাণিজ্য ঘাটতি কীভাবে সমন্বয় করা। আমরা সেই পরিপ্রেক্ষিতেই কাজ করছি।

গত মঙ্গলবার (০৮ এপ্রিল) এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি হয়েছে। ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি)এর ওই বিজ্ঞপ্তিতে রপ্তানি ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দেওয়া এই সুবিধা প্রত্যাহারের কথা জানানো হয়েছে। এর ফলে ভারতীয় ভূখণ্ডের কোনও বন্দর এবং বিমানবন্দরের শুল্ক অফিস ব্যবহার করে তৃতীয় কোনও দেশে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে না বাংলাদেশ।

২০২০ সালের ২৯ জুনের সার্কুলারটি বাতিল করা হচ্ছে এবং নতুন সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। তবে, যেসব পণ্যবোঝাই যানবাহন ইতিমধ্যে ভারতের ভূখণ্ডে আছে সেগুলোকে দ্রুত ভারতের ভূখণ্ড ত্যাগ করতে হবে।

উল্লেখ্য, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম অনুযায়ী, সদস্য দেশগুলোকে ভূমিবেষ্টিত দেশগুলোর জন্য অবাধ ট্রানজিট সুবিধা নিশ্চিত করতে হয়।

১৯৯৪ সালে সংস্থাটির জারি করা জেনারেল অ্যাগ্রিমেন্ট অন ট্যারিফস অ্যান্ড ট্রেড (জিএটিটি) এর পঞ্চম অনুচ্ছেদ অনুসারে, সব সদস্যকে স্থলবেষ্টিত দেশগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রানজিট দিতে হবে এবং এক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট সীমা দেওয়া যাবে না। তাছাড়া এই পণ্য পরিবহনকে শুল্কের আওতায় ফেলা যাবে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন