ঢাকা | শুক্রবার
২রা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১৯শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন ও পিআর পদ্ধতিতে ভোট চায় ইসলামী আন্দোলন

‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ নাম পরিবর্তন করে ‘পিপলস ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’ বা ‘বাংলাদেশ জনকল্যাণ রাষ্ট্র’ নামকরণের প্রস্তাব দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় দলের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল জাতীয় সংসদ ভবনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে এ প্রস্তাবনা জমা দেন।

কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের কাছে তারা লিখিত মতামত দেন। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, রাষ্ট্রের নামের মধ্যে যেন জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করার দর্শন প্রতিফলিত হয়, সে জন্য ‘পিপলস ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’ নামটি প্রস্তাব করছি।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে মোট ১৮২ দফা সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এসব প্রস্তাবের মধ্যে দলটি ১৪৫টিতে একমত, ২৬টিতে দ্বিমত এবং ৪১টি নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। এছাড়া তারা ৪টি মৌলিক প্রস্তাবও দিয়েছে।

দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা সংবিধান সংস্কারের অধিকাংশ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত। বিশেষ করে সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, একজন ব্যক্তি একাধিক পদে না থাকা, দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকা এবং ৭০ অনুচ্ছেদের বিলুপ্তি এসব বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছে দলটি।

পিআর পদ্ধতির (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর পক্ষেও জোরালো অবস্থান জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির দাবি, এই পদ্ধতি চালু হলে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হবে এবং ভবিষ্যতের স্বৈরতন্ত্র প্রতিরোধ করা যাবে। দলটি এই বিষয়কে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের অন্যতম প্রধান উপায় হিসেবে দেখছে এবং এ বিষয়ে নতুন প্রস্তাবনাও যুক্ত করেছে।

বিচার বিভাগীয় ২৩টি প্রস্তাবের মধ্যে ২১টির সঙ্গেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে একমত পোষণ করেছে। এর বাইরে শরীয়াহ কোর্ট স্থাপনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে এবং প্রমাণিত অপরাধীকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করার ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সম্মতিকে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন বিষয়ে প্রস্তাবিত মোট ২৬টি সংস্কারের মধ্যে ১২টি একমত পোষণ করেছে ইসলামী আন্দোলন। ৯টি প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা হয়েছে। আর ৫টির সঙ্গে আংশিক একমত পোষণ করা হয়েছে। এরমধ্যে বিশেষ করে প্রাদেশিক ও সিটি গভর্নমেন্ট প্রস্তাবের সঙ্গে এবং মেম্বারদের ভোটে চেয়ারম্যান নিয়োগের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করা হয়েছে। এছাড়া অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট সংশোধনের বদলে পুরো বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়োগে মন্ত্রীপরিষদ কমিটিরও বিরোধিতা করা হয়েছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের ৭০টি প্রস্তাবের মধ্যে ৬১টি প্রস্তাবে একমত, ৩টিতে একমত পোষণ করা হয়নি। ৬টিতে আংশিক একমত পোষণ করা হয়েছে। নতুন প্রস্তাব এবং মন্তব্য যুক্ত করা হয়েছে ১১টি ও মৌলিক প্রস্তাব ৪টি। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ২৩টি প্রস্তাবের মধ্যে ২১টি প্রস্তাবে একমত, ২টিতে দ্বিমত পোষণ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ২৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১২টি প্রস্তাবে একমত, ৯টি একমত পোষণ করা হয়নি। একটি বিশেষ মূল্যায়নসহ ১৩টি নতুন প্রস্তাবনা যুক্ত করা হয়েছে।

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের ২৭টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৮টি প্রস্তাবে একমত, ৯টি একমত পোষণ করা হয়নি। নতুন প্রস্তাবনা যুক্ত করা হয়েছে একটি। দুদক সংস্কার কমিশনের ২১টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৮টি প্রস্তাবে একমত, ৩টিতে একমত পোষণ করা হয়নি। নতুন প্রস্তাবনা ৫টি ও সুপারিশ যুক্ত করা হয়েছে তিনটি। পুলিশ সংস্কার কমিশনের ১৫টি প্রস্তাবের সবগুলোতেই একমত পোষণ করা হয়েছে।

এছাড়া, দেশে চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস বন্ধে ইসলামী আন্দোলন বিশ্বাস করে, বিদ্যমান আইন ব্যর্থ হয়েছে। তারা প্রস্তাব করেছে, এই অপরাধগুলো বন্ধ করার জন্য শরীয়াহ আইন কার্যকর করা জরুরি।

সংবাদটি শেয়ার করুন