‘সুস্থ সংস্কৃতি হোক মানবিক সমাজ গঠনের হাতিয়ার’ এই প্রত্যয়কে সামনে রেখে চবির ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘অঙ্গন’ এর ৩৫ বছর পূর্ণ করে ৩৬ বছরে পদার্পণ করেছে। এ উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও অঙ্গনের বর্ষপূর্তি উৎসব আয়োজন করা হয়েছে।
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত মঞ্চে আয়োজন করা হয় ৩৫ তম বর্ষপূর্তি আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এদিন দুপুর ২ টায় পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। যেখানে অঙ্গনের সদস্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার।

অনুষ্ঠানে সভা-প্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ‘অঙ্গন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়’-এর সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাহমান নাসির উদ্দিন।
আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অঙ্গনের সহ-সভাপতি অথই রহমান। অঙ্গনের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বর্ষব্যাপীর কার্যবিবরণী তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার এবং সর্বশেষে সমাপনী বক্তব্য রাখেন উক্ত অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি ড. রাহমান নাসির উদ্দীন।
শিক্ষার্থীদের সিলেবাস কিংবা পুঁথিগত বিষয়ের বাইরে জ্ঞান ও দক্ষতার উৎকর্ষ সাধনে এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি’কে উৎসাহ দিয়ে উপাচার্য ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, ক্যাম্পাসের উন্মুক্ত পরিবেশে নানান সাংস্কৃতিক, সামাজিক কর্মকাণ্ড একজন ছাত্রকে মানসিকভাবে উন্নত করে, পরিপূর্ণ মানুষ হতে সহায়তা করে। তিনি বলেন, অঙ্গন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে সমৃদ্ধ করেছে। অঙ্গনের অগ্রগতিকে সাধুবাদ জানাই।
এসময় বিদ্রহী কবি নজরুলের ব্রিটিশ বিরোধী কবিতা উল্লেখ করে উপচার্য অনুরোধ করে বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতার যায়গা থেকে ছাত্রদের যেখানে যেরকম ভূমিকা পালন করা দরকার, তাদের সেখানে সে ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের স্বার্থে সবসময় সচেতন থেকে ইতিবচক ভূমিকা পালন করতে হবে। উদাহরণস্বরুপ উপচার্য মুক্তিযুদ্ধের সময় ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে কামরুল হাসানের প্রতিবাদী কার্টুনের বিষয়টি স্বরণ করেন।
এসময় তিনি নতুন লেখকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, পুরস্কার কিংবা বিখ্যাত হওয়ার আশায় লেখক হতে চাইলে লেখকের মৃত্যু হয়। নির্দেশিত লেখক না হয়ে বরং স্বাধীন লেখক হওয়ার প্রতি এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার যায়গা থেকে লিখতে আহবান জানান। সাহিত্যকে সমাজের প্রতিচ্ছবি উল্লেখ করে উপাচার্য আরও বলেন, সামামাজিক, রাজনৈতিক অনাচার, অপশাসনসহ সকল বিষয়ে সাহিত্যে অন্তর্ভুক্ত রাখতে হবে। তা না হলে সাহিত্য একপেশে হয়ে যাবে। যা কখনোই টেকসই হবেনা। জনমানুষের সামগ্রিক জীবনের চিত্র যদি সাহিত্যে ফুঁটে না ওটে, তাহলে সে সাহিত্য গ্রহনযোগ্যতা হারায়। উপাচার্য আরও বলেন, বই মেলায় কত আয় হল, নতুন কত সংখ্যক বই প্রকাশ হল তার হিসেব হয়, কিন্তু কত টাকা প্রকাশনি পেল আর কত টাকা লেখক পেল তার হিসেব হয়না। একইভাবে প্রকাশিত বইগুলো কতটুকু মানসম্পন্ন তার হিসেব হয়না। যা খুবই দুঃখজনক।
অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে ছিল অঙ্গন ক্যাম্পাস শাখার ও সিনিয়র সদস্যদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এতে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিল অঙ্গন নাটক বিভাগের পরিবেশনায় ড. রাহমান নাসির উদ্দিনের রচনা ও পরিচালনায় মঞ্চনাটক ‘বাতিলের ঘর-বসতি’।
এছাড়াও সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্য বিভাগের পরিবেশনায় ছিল দেশাত্মবোধক ও আঞ্চলিকসহ নানা রকমের একক, দলীয় সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্য। সর্বশেষ পর্বে ছিল সিনিয়র সদস্যবৃন্দের পরিবেশনা। এর মধ্যে দিয়ে শেষ হয় অঙ্গনের ৩৫তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন হলো অঙ্গন।১৯৯০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল সংস্কৃতিপ্রেমী তরুণ শিক্ষার্থীদের হাত ধরে এই সংগঠনের পথ চলা শুরু। যা একটি অরাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন। অঙ্গন মূলত কাজ করে নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটক, শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে। দেশীয় সংস্কৃতিকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন অঙ্গন।
আনন্দবাজার/কআ