ঢাকা | রবিবার
৯ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২৪শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে তিন বছরেও চালু হয়নি আইসিইউ ইউনিট

জনবল সঙ্কটে ৩ বছরেও চালু হয়নি জয়পুরহাট ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) ইউনিট। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি থাকার পরও শুধুমাত্র জনবল সঙ্কটে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে এ গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটটি। এতে এই বিভাগের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জয়পুরহাটবাসী। তাই দ্রুত  চালু করার দাবি ।

জানা গেছে, ২০০৬ সালে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতাল হিসেবে ১৫০ শয্যার খাবারের অনুমোদন লাভ করে এই হাসপাতালটি। পরে ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে অনুমতি পায়। এখানে জয়পুরহাট জেলাসহ আশেপাশের নওগাঁ,ধামুরহাট ,বদলগাছি, দিনাজপুরের, হিলি গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার রোগীরা আসেন চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। হাসপাতালটি বিগত বছরগুলোতে দেশের সেরা হাসপাতালগুলোর একটি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে আসছে। এ অবস্থায় ২০২২ সালের জানুয়ারী মাসে এই হাসপাতালের পুরাতন ভবনের চার তলার একটি কক্ষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, গণপূর্তবিভাগ, জেলা পরিষদ এবং স্থানীয় বেসরকারি সংস্থার সহযোগীতায় ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট প্রস্তুত করা হয়। এতে ব্যয় হয় প্রায় দেড়কোটি টাকা। এরপর এটি চালুর জন্য হাসপাতালের পক্ষ থেকে ১৬জন নার্সকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। তবে উন্নতমানের সব যন্ত্রপাতি প্রস্তুত থাকলেও তিনবছরেও চালু হয়নি গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটটি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ইউনিটটি ২৪ ঘন্টা চালু রাখার জন্য প্রয়োজন ৬ থেকে ৭ জন অবেদনবিদ (এনেস্থেসিওলজিষ্ট) চিকিৎসক ও ১০ জনের মতো ওয়ার্ডবয় ও আয়া। তবে এই হাসপাতালে আছেন মাত্র একজন অবেদনবিদ চিকিৎসক। ফলে তিন বছর ধরে চালু হচ্ছেনা এ ইউনিটটি। এদিকে এই আইসিইউ ইউনিটটি চালু না হওয়ায় বিপাকে পড়ছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মুমূর্ষু রোগীরা। বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে রাজশাহী ঢাকা বগুড়াসহ অন্য জায়গায়।

জয়পুরহাট সদরের বামনপুর গ্রামের জমির উদ্দিন বলেন, হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট চালু হওয়ার কথা শুনে আসছি দীর্ঘদিন থেকে। কিন্তু কি কারণে সেটি চালু হচ্ছে না জানিনা। ইউনিটটি চালু হলে আমাদের মত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের রোগীদের অর্থ ও সময় দুটোই সাশ্রয় হতো।

পাঁচবিবির পাঁচগাছির জেসমিন আক্তার বলেন, জয়পুরহাট হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিট দীর্ঘদিনেও চালু না হওয়ায় আমাদের মত গরিব মানুষদের খুবই কষ্ট হচ্ছে রোগীদের নিয়ে। আমার  স্বামীর কিডনি রোগী হওয়ায় এ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করার জন্য আসতে হয়। অনেক সময় আইসিইউ’র প্রয়োজন হয়। তখন আমাদের বাধ্য হয়ে বগুড়ায় যেতে হয়। এজন্য অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

আমদই গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, জয়পুরহাট জেনারেল প্রতিদিন হাজারও মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু এখানে আইসিইউ ইউনিট চালু না হওয়ায় অনেক সময় মুমূর্ষ রোগী বগুড়া নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যায়। এজন্য আইসিইউ ইউটিনিট  দ্রত চালু করার দাবি জানাচ্ছি।

সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন জেলা শাখার সভাপতি নূর-ই-আলম বলেন, জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে শুধু জয়পুরহাটের মানুষ সেবা নিতে আসে তা নয়, এখানে আশপাশের জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকেও মানুষ আসেন। কিন্তু আমরা দেখছি এতো বড় হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিটটি এখনো চালু করা হচ্ছেনা। এতে করে সাধারণ মানুষদের অন্য জেলায় যেতে অনেক ভোগান্তি হচ্ছে। এজন্য এই ইউনিটটি দ্রুত চালু করার দাবি জানাচ্ছি।  

এ বিষয়ে জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ সরদার রাশেদ মোবারক জুয়েল বলেন, করোনার সময়ই আইসিইউ ইউনিটের প্রয়োজন উপলব্ধি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট প্রস্তুত করেছি। এজন্য ১৬ জন নার্সকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আইসিইউ চালু করতে গেলে ৬ থেকে ৭ জন এনেস্থেসিওলজিষ্ট চিকিৎসক ও ১০ জনের মতো বয় ও আয়া প্রয়োজন হয়। এজন্য যন্ত্রপাতি প্রস্তুত থাকলেও জনবল সঙ্ককটের কারণে এই ইউনিটটি চালু করা যায়নি। তবে আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছি। আমরা আশ্বাস পেয়েছি। আশা করছি দ্রুত এটি চালু হবে।

জয়পুরহাট সিভিল সার্জন ডাঃ মুহাঃ রুহুল আমিন বলেন, আইসিইউ ইউনিটে সব যন্ত্রপাতি প্রস্তুত থাকার পরও শুধু মাত্র চিকিৎসক ও জনবল না থাকায় চালু হচ্ছেনা। আমরা বিষয়টি নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। জনবল নিয়োগ হলেই এটি চালু হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন